নিয়ম না থাকার পরেও শিক্ষক-কর্মচারীদের আয় কর প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে পরিশোধ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Published : 04 Feb 2021, 04:59 PM
২০১৩-১৪ অর্থবছরের ওই আর্থিক অনিয়মের জন্য এক কোটি ৭০ লাখ তিন হাজার ৭৮১ টাকার অডিট আপত্তি দিয়েছে হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।
বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব কমিটির বৈঠকে এই অডিট আপত্তিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ছয়টি আর্থিক অনিয়ম নিয়ে আলোচনা হয়।
মোট সাতটি অডিট আপত্তির নথি থেকে দেখা গেছে, এর সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ ৭ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ টাকা।
কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ওই অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের আয়কর পরিশোধ করায় অডিট দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, বিধিগত সুযোগ না থাকার পরেও এমন আয়কর পরিশোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন লংঘন এবং আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে।
কমিটির সদস্য আব্দুস শহীদ বৈঠক শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেসব অডিট আপত্তি এসেছে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। কমিটি জড়িত অর্থ আদায়ে সময় বেঁধে দিয়েছে এবং কয়েকটি আপত্তি নিষ্পত্তি করতে কমিটি গঠন করতে বলেছে।”
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, আয়কর পরিশোধ বাবদ সরকারি অর্থের ক্ষতি মেটানোর জন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা থেকে টাকা কেটে নিতে বলেছে হিসাব কমিটি।
বৈঠকে জানানো হয়, শিক্ষক-কর্মচারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনে বসবাস করার পরেও তাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হারে বাসা ভাড়া কেটে নেওয়া হয়েছে, তাতে এক কোটি ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ২৪১ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এই বিষয়টি সুরাহার জন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি, গণপূর্তের যুগ্ম সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব ও অডিট দপ্তরের একজন পরিচালককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেবে সরকারি হিসাব কমিটি।
এদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষক-কর্মচারীদের এক কোটি ৫৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩৬ টাকা শ্রান্তি বিনোদন ভাতা দেয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ২০১০ সালে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওই ভাতা রহিত করলেও তা দেওয়া হয়। এজন্য ভাতা প্রাপ্তদের কাছ থেকে ওই অর্থ আদায় করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনার ভাড়া, পরিশোধিত বিল এবং মুদ্রণ বিলের উপর ভ্যাট আদায় না করায় এবং আদায় করেও তা সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ায় ৫১ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৩ টাকা আর্থিক ক্ষতির কথা বলেছে অটিড দপ্তর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চার মাসের মধ্যে এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব শিক্ষককে ঢালাওভাবে ৫০০ ও ৭৫০ টাকা করে প্রতি মাসে গবেষণা ভাতা দেয়। জাতীয় বেতন স্কেলে এ রকম কোনো খাত না থাকায় এ বিষয়ে অডিটে আপত্তি দেওয়া হয়। এতে মোট এক কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা জড়িত। এই অডিট আপত্তির বিষয়ে অডিট দপ্তর বলেছে, যারা গবেষণা করছে তাদের নীতিমালার মাধ্যমে এই ভাতা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে দেওয়ার সুযোগ নেই।
সরকারি হিসাব কমিটি এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে বিধি বহির্ভূতভাবে দেওয়া অর্থ আদায় করতে বলা হয়েছে।
২০১২-১৩ অর্থবছরের হিসাব পরীক্ষা করে অডিট দপ্তর পেয়েছে, ১৪ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে দেশে ফেরত আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলেও পাওনা টাকা আদায় করেনি। তাদের কাছ থেকে ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ টাকা দ্রুত আদায়ের সুপারিশ করেছে কমিটি।
এদিকে ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পেশাগত জ্ঞানের বিপরীতে এবং ঠিকাদারি বিল হতে উৎসে আয়কর না কাটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে বলে অডিট আপত্তি দিয়েছে অডিট দপ্তর। এর সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ ৮০ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৬ টাকা। কমিটি এই টাকা দ্রুত আদায় করার সুপারিশ করেছে।
কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ, মো. আব্দুস শহীদ, আফছারুল আমীন, শহীদুজ্জামান সরকার, মনজুর হোসেন, আহসানুল ইসলাম (টিটু), ওয়াসিকা আয়শা খান ও জাহিদুর রহমান অংশ নেন।
বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।