পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা থেকে আসত স্পিরিট, তার সঙ্গে নানা কিছু মেশাতেন এক ভাঙারি দোকানি; তার তৈরি করা সেই তরলই পুরনো মদের বোতলে ভরে নতুন মদ হিসেবে হত বিক্রি।
Published : 02 Feb 2021, 08:44 PM
ঢাকার ভাটারা এলাকায় সোমবার ভেজাল মদের একটি কারখানায় পুলিশের অভিযানের পর এই চিত্র দেখা গেল।
মদ পানে সম্প্রতি কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনায় ভেজাল মদের বিষয়টি আলোচনায় আসার প্রেক্ষাপটে এই অভিযান চালানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ারহাউসগুলো থেকে মদ কেনায় কড়াকড়ি আরোপের কারণে বাজারে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে ঢুকে পড়েছে ভেজাল মদ, আর তা তৈরিতে কারখানাও গড়ে তোলা হয়েছে।
ভাটারা থানার খিলবাড়িরটেক এলাকার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে ওই কারখানার সন্ধান মেলে।
সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মনতোষ চন্দ্র অধিকারী আকাশ (৩৫), রেদুয়ান উল্লাহ (৩৫), সাগর বেপারী (২৭), নাসির আহমেদ রুহুল (৪৮), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) ও সৈয়দ আল আমিন (৩০) নামে ছয়জনকে।
বিপুল পরিমাণ ভেজাল মদসহ, মদ তৈরির নানা সরঞ্জাম, মদের পুরনো বোতলও পাওয়া যায় সেখানে।
গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মো. মশিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই কারখানার মালিক নাসির আহমেদ রুহুল, ‘ম্যানেজার’ সৈয়দ আল আমিন এবং ‘চিফ কেমিস্ট’ জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীরের পরিচয় জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তার বাড়ি চাঁদপুরে। একসময় ভাঙারি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। বিভিন্ন প্লাস্টিক ও কাচের বোতল সংগ্রহ করে মিডফোর্ডে বিক্রি করাই তার কাজ ছিল।
পড়ালেখা না জানা এই জাহাঙ্গীরই তিন মাস ধরে কারখানাটিতে ভেজাল মদ তৈরি করছিলেন। এজন্য প্রতিদিন ৫০০ টাকা পেতেন বলে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন।
মশিউর বলেন, “এই ভাঙারি দোকানদার চড়ামূল্যে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের হাতে তুলে দিত মদ নামক বিষ।
“তারা পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা থেকে স্পিরিট, স্টিকার, রং সংগ্রহ করে, চিনি পোড়ানো কালার ব্যবহার করে নকল মদ তৈরি করত।”
তিনি বলেন, এই চক্রের ‘হোতা’ নাসির দীর্ঘদিন ধরেই মদ বিক্রি করে আসছিল। ‘ম্যানেজার’ আল আমিন বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার মাধ্যমে সেবনকারী পর্যায়ে বিক্রি করত।
পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর বলেন, বাড়িটি থেকে বিপুল পরিমাণ নকল বিদেশি মদ, খালি মদের বোতল, মদের বোতল আটকানোর ছিপি, স্টিকার, স্পিরিট, কৃত্রিম রঙ, সিলগালার সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।
যেভাবে সন্ধান
ভেজাল মদ পানে এক ব্যক্তির মৃত্যুর সূত্র ধরে এই কারখানাটির সন্ধান পাওয়া যায় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
মশিউর বলেন, গত দুই দিন বিষাক্ত মদপানে কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনার পর গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করতে শুরু করে।
একটি মৃত্যুর ঘটনায় ওই ব্যক্তি মদ পেয়েছিলেন কীভাবে, তা একটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর বিক্রেতাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে পুলিশ।
মশিউর বলেন, “রেদুয়ান এবং মনতোষ চন্দ্র অধিকারী আকাশ মোটর সাইকেল যোগে ২৮ জানুয়ারি ১ বোতল মদ দিয়ে গিয়েছিল ওই ব্যক্তিকে, যা এই কারখানায় অবৈধভাবে কৃত্রিম কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি।”
এরপর রেদুয়ান ও মততোষের গতিবিধি অনুসরণ করতে থাকেন গোয়েন্দারা।
সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে তেজগাঁওর একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁর সামনে থেকে তাদের এবং সাগর বেপারীকে আটক করা হয় বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর।
তিনি বলেন, তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভাটারার বাড়িটিতে অভিযান চালিয়ে নকল মদের কারখানা পাওয়া যায়।