কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সোমবার মামলাগুলো করা হয়েছে বলে দুদকের সচিব মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বোর্ডে সদস্যরা অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে ভুয়া ও কাগুজে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়ে আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করেছেন।”
দুদক সচিব জানান, এসব মামলায় পি কে হালদার ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সাবেক টেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি মো. রাশেদুল হক, নয় জন বোর্ড সদস্য, পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পি কে হালদারের অত্মীয় স্বজন ও সহযোগীসহ ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলাগুলোর মধ্যে আনাম কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা, সুখাদা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের নামে ৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, মেসার্স বর্ণ এর নামে ৬৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, রাহমান ক্যামিকেলস লিমিটেডের নামে ৫৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং মুন এন্টারপ্রাইজের নাম ৮৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।
আসামিদের মধ্যে পি কে হালদারের সহযোগী পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়াররম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসর সাবেক এমডি রাশেদুল হকে রোববার বিকেলে গ্রেপ্তার করে দুদক।
এক মামলায় এই দুই আসামির বিরুদ্ধে আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্নসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে দুদক কার্যালয় থেকে তাদের আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন।
আসামিদের তালিকায় আছেন আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমিতাভ অধিকারী, পরিচালক প্রিতিশ কুমার হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, রাজীব সোম, রতন কুমার বিশ্বাস ও পরিচালক ওমর শরীফ।
এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক আনোয়ারুল কবীর, মো. নুরুল আলম, নাসিম আনোয়ার, মো. নুরুজ্জামান, মোহম্মদ আবুল হাসেম, জহিরুল আলম, পরিচালক নওশেরুল ইসলাম, বাসুদেব ব্যানার্জি ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জির নাম রয়েছে মামলায়।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক মিজানুর রহমান, একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান, ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই, অ্যাসিটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আল মামুন সোহাগ, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী এবং কোম্পানি সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খানকেও একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।
আর রাহমান কেমিক্যাল লিমিটেডের পরিচালক স্বপন কমার মিস্ত্রি, কাজী মমরেজ মাহমুদ, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম, মেসার্স বর্ণ লিমিটেডের মালিক অনঙ্গ মোহন রায়, মুন এন্টারপ্রাইজের মালিক শঙ্খ বেপারীকেও রাখা হয়েছে আসামির তালিকায়।
পাঁচ মামলায় কমিশনের তিন কর্মকর্তা বাদী হয়েছেন। তারা হলেন- দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক নারগিস সুলতানা ও উপ-সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। তাদের মধ্যে গুলশান আনোয়ার প্রধান একটি মামলা এবং অপর দুইজন কর্মকর্তা দুটি করে মামলার বাদী।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।
এই চার কোম্পানি হল- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ২৭৫ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ খবর দিয়ে মামলা করে।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালদার তার নিজের, আত্মীয়দের, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার ‘বৈধ কোনো উৎস’ অনুসন্ধানে মেলেনি।
পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারে ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। তার মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাই কোর্ট।
আরও পড়ুন: