অর্থপাচার ঠেকানোর দায়িত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারা কারা ছিল, তালিকা চাইল হাই কোর্ট

অর্থ পাচার রোধ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তদারক-নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে গত এক যুগে কোন কোন কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের নাম, পদবী, ঠিকানাসহ বিস্তারিত জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2021, 01:15 PM
Updated : 21 Jan 2021, 01:16 PM

এই সময় (২০০৮ থেকে ২০২০ সাল) অর্থপাচার রোধে সংশ্লিষ্ট বিভাগের এসব কর্মকর্তার ব্যর্থতা আছে কি না, ব্যর্থ হয়ে থাকলে কেন হলেন, অর্থপাচারের বিষয়টি তারা টের পেয়েছিলেন কি না, পেয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন কি না, তাদের ইন্ধন বা যোগসাজশে অর্থপাচার হয়েছে কি না, তাও জানাতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানার পর এ আদেশ দিয়েছে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।

সেই সঙ্গে এ মামলায় পক্ষভুক্ত হতে পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। 

আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের-দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মানিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

এছাড়া পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর পক্ষে আইনজীবী মোশারফ হোসেন ও পি কে হালদারের স্বজন ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক অমিতাভ অধিকারীর পক্ষে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক এবং পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আইনজীবী মেজবাহুর রহমান শুনানিতে ছিলেন।

গত বছর ১৮ নভেম্বর দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর গত ১৯ নভেম্বর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেয় এই হাই কোর্ট বেঞ্চ।

পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বা গ্রেপ্তার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যানকে ১০ দিনের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়।

এছাড়া পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কিংবা গ্রেপ্তারে কী যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, সে ব্যাখ্যা জানাতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত।

দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আদেশ অনুযায়ী, দুদক গত বছর ২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর গত ৯ ডিসেম্বর পি কে হালদারের আত্মীয় পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক পরিচালক অমিতাভ অধিকারী ও পি কে হালদারের সাবেক সহকর্মী পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার নন্দীকে এ মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়।

সেই সঙ্গে ইন্টারপোলে পি কে হালদারের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানাতে বলে গত ৩ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য রাখে।

ওই দিন শুনানি শুরু হলে দুদক আইনজীবী আদালতে পাঁচ আমানতকারীর কথা বলে অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দিলে এক এক করে তারা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

পরে ৫ জানুয়ারি পাঁচ আমানতকারীকে এ মামলায় পক্ষভুক্ত করে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের আবেদনে পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও সাবেক সচিব ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান এন আই খানসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট।

সেদিন আদালত ২০ জানুয়ারি তারিখ রেখে আদালত পি কে হালদারকে ধরতে রেড নোটিস ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো ও তদন্তের অগ্রগতি জানাতে বলে।

এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার অগ্রগতি জানায় দুদক।

ইন্টারনেশনাল লিজিং ও পিপলস লিজিংকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমতি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেওয়া হয়েছিল কিনা, শুনানিতে সে বিষয়ে দুদকের আইনজীবী নির্দেশনা চান।

তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক নজরুল ইসলাম তালুকদার তাতে সাড়া না দিয়ে বলেন, “ওই দিকে আমাদের যাওয়ার দরকার নাই। তারা হয়ত প্রশাসনিক নীতিমালা অনুযায়ী সেটা করেছে। এটা আমাদের দেখার বিষয় না।

“আমাদের দেখার বিষয় হল তাদের ব্যর্থতা কেন? কেন তারা ব্যর্থ হল, তারা কেন চিহ্নিত করতে পারল না? তাদের কোনো ইন্ধন ছিল কি না? যোগসাজশ আছে কি না? আমরা সেটা জানতে চাই।“

“তারা ওই খানে চাকরি করবে, এত বড় একটা ঘটনা ঘটে যাবে, তারা কিছুই বলতে পারবে না। এটা তো হতে পারে না। তাদের অবশ্যই দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে। তারা পাবলিক সার্ভেন্টস। মানুষের প্রতি তাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে। কাজ করবেন কিছুই করতে-বলতে পারবেন না, খেয়েদেয়ে বাড়ি বানাবেন, বেতন-ভাতা নিবেন, দেশের জন্য, জনগণের জন্য কাজ করবেন না, তা তো হয় না।”

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“বাংলাদেশের ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তারা ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ পর্যন্ত অর্থ পাচার রোধ সংক্রান্ত বিষয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন তাদের নাম, ঠিকানা, স্টেটাস জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

“এছাড়া পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানের পক্ষভুক্তির আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।”

দুদক আদালতে কী প্রতিবেদন দিয়েছে- জানতে চাইলে খুরশীদ আলম বলেন, “পি কে হালদারের ৮৩ সহযোগীর নাম-পরিচয়সহ একটি প্রতিবেদন সারসংক্ষেপ আকারে আদালতে উপস্থাপন করেছি। এই ৮৩ জনের ব্যাপরে দুদক কী করেছে না করেছে সে ব্যপারে পরবর্তীতে বৃহৎ পরিসরে প্রতিবেদন দিব। সংক্ষেপে যেটা বলা হয়েছে তা হলো, এই ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলছে। তাছাড়া আর্থিক খাতের দুর্নীতি নিয়ে আরও ১০টি মামলার প্রস্তৃতি নেওয়া হচ্ছে।”