পিপলস লিজিংয়ের ঋণ খেলাপিদের হাই কোর্টে তলব

পি কে হালদার সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৫ লাখ টাকা কিংবা তার বেশি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, এমন ২৮০ জনকে তলব করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2021, 12:50 PM
Updated : 21 Jan 2021, 02:15 PM

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন হাই কোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের বিচারক মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার।

অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবাসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া এ সংক্রান্ত তালিকা দেখে বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেওয়া হয়।

অবাসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের আইনজীবী মেজবাহুর রহমান বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তলবের পাশাপাশি এই ২৮০ জনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।”

আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন কাজী এরশাদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল ওয়াহাব।

দুদক কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, অর্থ পাচার করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার আগে পি কে হালদার তার আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে যে চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন তার একটি হল পিপলস লিজিং।

১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ।

২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান গুণে প্রতিষ্ঠানটি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয় আদালত।

এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়।

পরে সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এরপর আদালত পিপলস লিজিংয়ের ঋণ গ্রহীতাদের একটা তালিকা চায় সাময়িক অবাসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের কাছে।

আইনজীবী মেজবাহুর রহমান বলেন, “নির্দেশ অনুযায়ী গত বছর ২৩ নভেম্বর প্রায় পাঁচশ জন ঋণ গ্রহীতার একটি তালিকা দাখিল করা হয়। সে তালিকা দেখার পর আদালত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যারা পাঁচ লাখ বা তার বেশি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন তাদের তিনি কারণ দর্শাতে নোটিস করেছেন এবং তাদের সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশটি এখনও আদালত থেকে নামেনি। আদেশটি নামার পর রেজিস্ট্রি ডাকে পাঠানো হবে।”

অবাসায়ক মো. আসাদুজ্জামান খানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ২৮০ জন ঋণ খেলাপি লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছর মেয়াদী ঋণ), লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ), টার্ম লোন (পাঁচ বছর মেয়াদী ঋণ), টার্ম লোন (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ), হোম লোন (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) ও মার্জিন লোনসহ মোট ৬ ধরনের ঋণ নিয়েছেন।

তার মধ্যে লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছর মেয়াদী ঋণ)-এ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৪ কোটি ১৫ লাখ ৮ হাজার ৪৭১টাকা), লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) এ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৭ কোটি ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ২৮৮ টাকা।

টার্ম লোনের (পাঁচ বছর মেয়াদী ঋণ)খেলাপি  ৮৭৭ কোটি, ৩৭ লাখ, ৬৬ হাজার ৩৭১টাকা, টার্ম লোনের (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ কোটি, ৩০ লাখ, ৫ হাজার, ৭৭৬ টাকা।

হোম লোনের (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৭ কোটি ৯৬ লাখ, ২৮ হাজার ১৪৩টাকা। আর মার্জিন লোনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৪৪ কোটি, ৮৭ লাখ ৫৮ হাজার, ১৩ টাকা।

মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।