কাকরাইলে মা-ছেলে হত্যার রায় ১৭ জানুয়ারি

ঢাকার কাকরাইলে তিন বছর আগে মা-ছেলে খুনের ঘটনায় নিহত নারীর স্বামী, তার তৃতীয় স্ত্রী এবং শ্যালকের সাজা হবে কি না, তা জানা যাবে আগামী ১৭ জানুয়ারি।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2021, 09:37 AM
Updated : 10 Jan 2021, 09:39 AM

দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানির পর রোববার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম রায়ের এ তারিখ ঠিক করে দেন।

২০১৭ সালের ১ নভেম্বর কাকরাইলের পাইওনিয়র গলির ৭৯/১ নম্বর বাসায় শামসুন্নাহার করিম (৪৬) ও তার ছেলে সাজ্জাদুল করিম শাওনকে (১৯) গলা কেটে হত্যা করা হয়।

মামলার তিন আসামি হলেন- শামসুন্নাহারের স্বামী আব্দুল করিম, করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তা ও মুক্তার ভাই আল-আমিন ওরফে জনি। তারা সবাই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালাউদ্দিন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি।”

আসামিপক্ষ এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ১৯ কার্যদিবস ধরে জেরা করে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ কারণে মামলার বিচার শেষ হতে একটু দেরি হল।”

আইনজীবী সালাউদ্দিন জানান, আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে গিয়ে মামলাটি আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আপত্তির বিষয়গুলো আবারও তুলে ধরে।

“তারা বলেন, এ মামলাটি বিচারের জন্য আমলে নিতে যাথাযথভাবে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এর উত্তরে আমরা বলেছি যে এটি বিশেষ মামলা নয়, সাধারণ জিআর মামলা, যেখানে ফৗজদারি কার্যবিধি অনুসরণ করা হয়েছে। সে কারণে কোনো ত্রুটি নেই।

মামলার মূল আসামি আল আমিন জনি

এর আগের দিন আসামিপক্ষ আদালতকে বলেছিল, আসামি আব্দুল করিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না এবং হত্যাকাণ্ডে তার কোনো ‘সম্পৃক্ততাও নেই’।

এর উত্তরে রোববার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়ে বলেন, হত্যার ষড়যন্ত্রে ‘যুক্ত ছিলেন’ আসামি করিম।

কাকরাইলে রাজমনি প্রেক্ষাগৃহের পশ্চিম দিকে রাজমনি কার সেন্টার ও বায়রা ডাটাবেইজের মাঝের গলিতে করিমের একটি বাড়ির পঞ্চম তলায় খুন হন শামসুন্নাহার ও ছেলে সাজ্জাদুল করিম শাওন। শামসুন্নাহারের বড় দুই ছেলে বিদেশে থাকেন।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, মুন্সীগঞ্জের শামসুন্নাহার (৪৬) ব্যবসায়ী করিমের প্রথম স্ত্রী। পরে ফরিদা নামের এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন করিম। ফরিদার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর তিনি মুক্তাকে বিয়ে করেন।

করিম মুদি পণ্যের ব্যবসা ছাড়াও এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের প্রযোজনা ও পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ সে সময় জানায়।

ওই হত্যাকাণ্ডের পরদিন শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী রমনা থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেখানে করিম, মুক্তা ও জনিসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় করিম ও তার তৃতীয় স্ত্রী মুক্তাকে। পরে তাদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এরপর ওই বছরের ৩ নভেম্বর রাতে গোপালগঞ্জ থেকে মামলার মূল আসামি জনিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

ছয় দিনের রিমান্ডের মধ্যেই ৮ নভেম্বর জনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে মুক্তাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক মো. আলী হোসেন তিনজনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এরপর ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তিন আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেয় ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত।

এ মামলার বিচারকালে অভিযোগপত্রের ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য শোনেন বিচারক। ১২ নভেম্বর তিন আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।

এরপর ১৩ ডিসেম্বর দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শুরু হয়। সেই শুনানি শেষ রোববার মামলাটি রায়ের পর্যায়ে এল।

পুরনো খবর