২০২০: সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস থামেনি এখনও

নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ২০২০ সালেও দেখতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2020, 05:51 PM
Updated : 29 Dec 2020, 05:51 PM

এ বছরও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সাক্ষী হয়েছে ভোলার মনপুরা, কুমিল্লার কোরবানপুর গ্রাম। একই অভিযোগে মানুষ পুড়িয়ে মারার মত নৃশংসতা ঘটেছে লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে।

সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও উগ্রবাদের বিস্তার থামানো যায়নি। বছরের শেষভাগে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে সকল ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে হুঙ্কার তুলেছে উগ্রবাদী গোষ্ঠী। 

সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মীরা বলছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জানমাল রক্ষায় জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু নিরাপত্তা আইন, সংখ্যালঘু কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি থাকলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি।

তবে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই বলেছেন, এ দেশে ‘ধর্মের নামে কোনো বিভেদ’ সৃষ্টি করতে তিনি দেবেন না।

বছর শেষে দৃশ্যপটে হেফাজত

নারী শিক্ষা ও অধিকার, ভিন্ন মতের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অভিযোগ করে আসা হেফাজতে ইসলাম বছরের শেষ ভাগে আবারও দৃশ্যপটে হাজির হয় জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণ না করার দাবি নিয়ে।

গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়। একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মামুনুল হক প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।

এরপর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক মাহফিলে অংশ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া’ হবে।

তাদের এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যেই ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে কুষ্টিয়া শহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের ভাঙচুর চালানো হয়।

পরে সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও দেখে কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাসউদ মাদ্রাসার দুই ছাত্র এবং তাদের উসকে দেওয়ার অভিযোগে ওই মাদ্রাসার দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ভাস্কর্য বিরোধিতা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় জুনাইদ বাবুনগরী ও মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ঢাকার আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ‘ভাঙচুরকারী ও ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে উসকানিদাতাদের’ বিরুদ্ধে সংবিধান এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এসেছে হাই কোর্ট থেকে।

সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের চিত্র

বছরজুড়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের গবেষণায়।

চলতি বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর- এই সাত মাসের ‘সাম্প্রদায়িক চালচিত্র’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে দেশে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ১৭ জনকে হত্যা, ১০ জনকে হত্যাচেষ্টার, ১১ জনকে হত্যার হুমকির, ৩০ জনকে ধর্ষণ ও নির্যাতন, ছয় জনকে ধর্ষণের চেষ্টা, শ্লীলতাহানির কারণে তিনজনের আত্মহত্যা এবং ২৩ জনের অপহরণের শিকার হওয়ার তথ্য এসেছে সংবাদমাধ্যমে।

পাশাপাশি ২৭টি প্রতিমা ভাঙচুর, ২৩টি মন্দিরে হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, ২৬টি বসতবাড়ি, জমি ও শ্মশান উচ্ছেদের ঘটনা, পাঁচটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা, ৭৩টি উচ্ছেদ চেষ্টা, ৩৪ জনকে দেশত্যাগের হুমকি, ৬০টি পরিবারকে গ্রামছাড়া করা, চারজনকে ধর্মান্তরিত হতে হুমকি, সাতজনকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা, ৮৮টি বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট, ২৪৭ জনের ওপর দৈহিকভাবে হামলা এবং ধর্ম নিয়ে ‘কটূক্তি’ করার অভিযোগে চারজনকে আটক করা হয়েছে।

ফরাসি সাময়িকীতে নবীকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে ক্ষোভ চলছিল, যার আঁচ লাগে বাংলাদেশেও। এর মধ্যেই ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভয়ঙ্কর এক ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে স্তম্ভিত করে দেয়।

সেদিন সন্ধ্যায় ‘কোরআন অবমাননার’ অভিযোগ তুলে এসে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজারে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় আবু ইউনুস মো. সহিদুন্নবী জুয়েল নামের এক ব্যক্তিকে।

উত্তেজিত জনতার হাত থেকে বাঁচাতে জুয়েলকে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। সেখান থেকে বের করে এনে তাকে হত্যা করা হয়।

জুয়েলের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছিল তিনটি; গ্রেপ্তার হয়েছিল ৫ জন। পরে এ ঘটনার তদন্তে নামে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়,বুড়িমারীতে কোরআন অবমাননার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

বুড়িমারীর ঘটনার রেশ না কাটতেই ১ নভেম্বর কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় হিন্দুদের বাড়ি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ধর্ম অবমাননার ধুয়া তুলে মাইকে প্রচার চালিয়ে লোকজনকে জড়ো করে মুরাদনগরের কোরবানপুর গ্রামে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ হয়। পূর্ব ধউর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বনকুমার শিব ও তার ভাইয়ের বাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এলেও হামলাকারীদের বাধায় ঢুকতে পারেনি। পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী- সবারই অভিযোগ, পরিকল্পনা করেই এ ঘটনা ঘটানো হয়।

এর আগে গত ১৬ মে ভোলার মনপুরার চৌমুহনী বাজারে এক মাছ ব্যবসায়ী তরুণের ফেইসবুক আইডি থেকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ উঠলে জুমার নামাজের পর কিছু লোক মিছিল করে ওই যুবকের দোকানে হামলা চালায়। পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বাঁধে, তাতে অন্তত ১০ জন আহত হন। পরে ওই যুবকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ।

গত ২১ এপ্রিল কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের সাতানী হাইল্লা গ্রামে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে এক যুবকের ওপর হামলা করা হয়। পরে পুলিশ সেই যুবককে গ্রেপ্তার করে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের আগে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা এ বছরও ঘটেছে দেশের কয়েকটি জেলায়।

ফরিদপুরের টিটুরকান্দি, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, জামালপুরের মেলান্দহ, লক্ষ্মীপুরের শাঁখারিপাড়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, সিলেটের যতরপুর, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, রাঙামাটির কেপিএম, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বাগেরহাটের চিতলমারী এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর ও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা উঠে এসেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনে।

২০২০ সালে সারা দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ–নিপীড়নের নানা ঘটনা ক্ষুব্ধ করেছে গোটা বাংলাদেশকে। নিপীড়িতদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী ও শিশুরাও আছে। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সাভারের নীলা রায় হত্যাকাণ্ড ছিল এ বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা।

সেই ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুবিচার মেলেনা বলে অভিযোগ রয়েছে ঐক্য পরিষদের।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে সিলেটের জালালাবাদে এক হিন্দু পরিবারের ১২ বছরের মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশের ‘সহযোগিতা না পেয়ে’ পরিবারটি পরিষদের দ্বারস্থ হয়। এরপর বিভিন্ন  প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হলেও একসময় বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

গাইবান্ধার হিজলগাড়ি, রাজশাহীর ঘাসিগ্রাম, বরিশালের উজিরপুর, ফরিদপুরের বাসপুর, রংপুরের দোওয়ানটূলি, ময়মনসিংহের হাতিলেইট গ্রামের এরকম আরও কয়েকটি যৌন নিপীড়নের ঘটনায় সুবিচার মেলেনি বলে অভিযোগ করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

দেশের নানা স্থানে অপহরণের পর ধর্মান্তরিত করার ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচ। এরকম বেশ কিছু ঘটনা তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

নির্যাতনের ঘটনায় মামলার হার‘ ২৫-৩০%’

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় মামলার হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।

“নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়েরের হার ক্রমশ কমছে। এসব মামলায় বিচার পাওয়ার হার ৫ থেকে ৬ শতাংশ। নির্যাতনের ঘটনায় বিচার আমলে না নেওয়া, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও যথাযথ বিচার না পাওয়ায় অনেকেই মামলা করেন না।”

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের চাপে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার গত নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের কথা তাদের ইশতেহারে লিখেছিল। সেটা কিন্তু আমরা দুই বছরের মধ্যে কার্যকর হতে দেখিনি।

এছাড়া সাক্ষী নিরাপত্তা আইন করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “এই ধরনের নির্যাতনের ক্ষেত্রে শতকরা ১০ ভাগও মামলা করে না। কারণ মামলা করলে তো আরেক ধরনের নির্যাতন। আসামিরা হুমকি দেবে, দেশছাড়া করবে। আইনের বিরাট পরিবর্তন দরকার। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে, সেই সঙ্গে তারা যেন গুরুত্ব দিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা করে সেটাও দেখতে হবে।”

সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি শিগগিরই আইন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বলে জানান তিনি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের গ্রেপ্তারেরও সমালোচনা করেন কাজল দেবনাথ। তিনি বলেন, “ধর্মীয় অবমামনা আইনটি যদি সব ধর্মের জন্য হয়, চারটি ধর্মের যে কোনো জায়গায় যে কোনো আচড় লাগলে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে একইভাবে রিঅ্যাক্ট করতে হবে।”

উগ্রবাদের উত্থানে ‘রাজনৈতিক ইন্ধন’

ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী সংগঠনগুলোর আস্ফালনের পেছনে ‘রাজনৈতিক ইন্ধন’ রয়েছে বলে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক মহল বিশেষের যে ইন্ধন আছে, এতে কোনো সন্দেহ নাই। জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন হারিয়েছে, সুতরাং জামায়াতে ইসলামী এদের মাধ্যমে অপরাধ করার চেষ্টা করছে। বিএনপি আজকে বড় একটা খাদের গর্তের ভেতরে পড়ে গেছে, সেখান থেকে উত্তরণের জন্য তারা নানা ইস্যু খুঁজছে। তারা নানা শক্তির উপর ভর করছে।… তারা যদি এসব রাজনৈতিক অপশক্তির সাথে যুক্ত হয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নাই।

তিনি বলেন, “ভাস্কর্য ইস্যুর পেছনে মূল লক্ষ্য হল বাংলাদেশের মূলনীতিগুলো উল্টিয়ে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি ধারায় নিয়ে যাওয়া। সাম্প্রদায়িক ধারায় নিয়ে যাওয়া। এটা রাজনৈতিক এজেন্ডাই বটে। রাজনৈতিক এজেন্ডা ছাড়া যে এটা ঘটেছে, এটা ভাবার কোনো কারণ নাই।”

তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো মাঝেমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। কখনও কখনও কেউ জঙ্গিবাদের আশ্রয় নিয়ে নানা ঘটনা ঘটায়।

“এ মহল বিশেষ নতুন কিছু না। একাত্তরে এদের পূর্বসূরিরাই হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিলে গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে; আলবদর-আলশামস ও রাজাকার হয়েছে। এরা অন্ধকারের শক্তি। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ হল শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পক্ষে। সেই শক্তি যদি দাঁড়ায় তাহলে এদের অস্তিত্ব থাকবে?”

লেখক শাহরিয়ার কবির বলেন, অনেকগুলো কাজ করার আছে। কিছু আশু করণীয়; কতগুলো আছে মধ্যবর্তী, কতগুলো দীর্ঘমেয়াদী।

“মধ্যমেয়াদী কার্যক্রমে আমাদের পাঠ্যক্রম ঠিক করতে হবে। মাদ্রাসার ছাত্ররা কেন ইতিহাস, সম্প্রীতির ইতিহাস, সভ্যতার ইতিহাস পড়বে না? গ্রামীণ সংস্কৃতিকে কেন পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে না?... এসব ব্যাপার তো নীতিনির্ধারকদের আমলে নিতে হবে।”

অন্যদিকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেছেন, “ধর্মের নামে উগ্রবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ঘৃন্য বিষয়। বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। সকলের সহযোগিতায় ধর্মীয় উগ্রবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে প্রতিহত করা হবে।”

সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রতিটি ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলে, শান্তির বার্তা শোনায়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিষয়টি কোন ধর্মই সমর্থন করে না।

“এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীর কাছে তার ধর্ম শ্রেষ্ঠ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র বিষয়। এছাড়া প্রতিটি ধর্মের মূল বিষয়গুলোতে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। সে সাদৃশ্যগুলোকে অবলম্বন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি করতে হবে।”