মুরাদনগরে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস: মাইকে হয়েছিল প্রচার, লুটপাটে ছিল ‘অচেনারা’

ধর্ম অবমাননার ধুয়া তুলে মাইকে প্রচার চালিয়ে লোকজনকে জড়ো করে কুমিল্লার মুরাদনগরের কোরবানপুর গ্রামে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ হয়েছিল বলে সরেজমিন ঘুরে তথ্য পাওয়া গেছে।

রিয়াজুল বাশার মুরাদনগর থেকে ফিরেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2020, 01:44 PM
Updated : 3 Nov 2020, 03:49 PM

হামলা ও অগ্নিসংযোগকারীরা লুটপাটও চালিয়েছিল, যাদের অনেকে অচেনা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এমনকি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বন কুমার শিবের ভাই বলেছেন, লুটপাটকারীদের তিনিও চিনতে পারেননি।

গত রোববার দুপুরের পর চেয়ারম্যান অধ্যাপক বন কুমার শিবের বাড়িতেও হামলা-অগ্নিসংযোগ হয়, বাদ যায়নি তার ভাইয়ের বাড়িও। এছাড়াও হিন্দুদের আরও কয়েকটি বাড়িতে চলে তাণ্ডব।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, প্রায় দেড় ঘণ্টার বেশি সময় চলে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এলেও হামলাকারীদের বাধায় ঢুকতে পারেনি।

লুটপাট, ভাংচুর শেষে আগুন দিয়ে বসতভিটা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়ার পর হামলাকারীরা যখন চলে যায়, তারপর আসে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ।

স্থানীয়রা বলছেন, আগের দিন মাইকিং করে আশপাশের গ্রাম ও ইউনিয়ন থেকে শত শত মানুষ জড়ো করা হয়েছিল। এমন ঘটনা এলাকায় আগে কখনও দেখেননি তারা।

পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী সবারই অভিযোগ, পরিকল্পনা করেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।

লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের সাক্ষী এই কক্ষটি।

যেভাবে শুরু

স্থানীয়রা জানায়, পূরব ধইর (পূর্ব) ইউনিয়নের কোরবানপুর গ্রামের এক ব্যক্তি ফ্রান্সে থাকেন। তিনি ও স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক তাদের ফেইসবুক আইডি থেকে হজরত ‍মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুনকে সমর্থন করে পোস্ট ও কমেন্ট করেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় বিভিন্নজনের কাছে ফেইসবুকের যে স্ক্রিনশটটি ছড়িয়েছে, তাতে দেখা যায় ফ্রান্স প্রবাসী ওই ব্যক্তি একটি পোস্টে লিখেছেন, “ফরাসি প্রেসিডেন্ট যে সব অমানবিক চিন্তাভাবনাকে শায়েস্তা করার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়।” তার তাতে ওই প্রধান শিক্ষক মন্তব্য লিখেছেন- ‘স্বাগতম প্রেসিডেন্টের উদ্যোগকে’।

তোতা ভূইয়া ও আলামীন মৃধা নামে দুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, তারা ফেইসবুকের স্ট্যাটাস দেখেননি, তবে অন্যদের কাছে শুনেছেন।

এই কথোপকথন কয়েকদিন আগের হলেও নানা গুজবে শনিবার থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। শনিবার রাতে কোরবানপুর গ্রামে একদল লোক বিক্ষোভে নামে।

কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।

মাইকে সমাবেশের প্রচার

ধর্ম অবমাননার ধুয়া তুলে রোববার দুপুরে কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।

কোরবানপুরের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববারের বিক্ষোভ সম্পর্কে শনিবার থেকেই তারা মাইকিং করতে শুনেছেন।”

দুজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তারা ব্যাটারিচালিত রিকশায় মাইকিং হতে দেখেছেন।

পাশের গ্রাম আন্দিকোটেও মাইকে একই ধরনের প্রচার হয় বলে স্থানীয়রা জানান, যেখানে একটি পুরনো মন্দির রয়েছে। তাণ্ডবের পর আন্দিকোটে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।

রোববার দুপুরের আগেই স্কুলের মাঠে বিভিন্ন এলাকার লোকজন জড়ো হতে শুরু করে। এর নেতৃত্বে ইব্রাহিম, রাজু, বাবলু নামে তিনজনের নাম বলেছেন স্থানীয়রা। সেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত হন দুপুরের মধ্যে।

কিন্ডারগার্টেনের যে শিক্ষক ফেইসবুক পোস্টে মন্তব্য করেছিলেন, তাকেসহ পাশের গ্রাম আন্দিকোটের আরেকজনকে শনিবারই পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়, তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর কথা রোববার ওই সমাবেশে উপস্থিতদের জানানো হয়।

স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, দুজনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ঘটনাটির ‘সমাধান’ রোববার দুপুরে হয়ে গেলেও তারপরই শুরু হয় তাণ্ডব।

ধর্ম অবমাননার গুজব তুলে লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত মুরাদনগরের পূর্ব ধইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বন কুমার শিবের বাড়ি।ছবি: রিয়াজুল বাশার

ভিন্ন একটি মিছিল থেকে তাণ্ডবের শুরু

জিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে যখন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা স্থানীয়দের বোঝাচ্ছিলেন। তখন বাইরে থাকা একটি মিছিল ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ শুরু করেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। পরে স্কুল মাঠে থাকা বিক্ষুব্ধরাও তাতে যোগ দেয়।

বন কুমার শিবের চাচাত ভাই শংকর কুমার শিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুর ৩টার দিকে শত শত মানুষ স্লোগান দিতে দিতে কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা অন্য এলাকা থেকে এসেছিল।

“আমি তখন কোরবানপুর বাজারে আমার দোকানে ছিলাম। বাজার থেকেই শিক্ষকের বাড়ির আগুন ও ধোঁয়া দেখতে পাই। তখন আমার বাড়িতে ফোন করে সবাইকে সাবধান হয়ে যেতে বলি এবং যতদ্রুত সম্ভব অন্যত্র সরে যেতে বলি।

“এরপর দেখি হাজার হাজার মানুষ স্লোগান দিতে দিতে আমাদের বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। পথে তারা একটি কালী মন্দির ভাংচুর করে। বাজারে স্থাপন করা পূর্ব ধইর ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান বেনু ভূষণ শিবের মূরাল ভেঙে ফেলা হয়।”

এরপর হামলা চালানো হয় বর্তমান চেয়ারম্যান বন কুমার শিব ও তার স্বজনদের বাড়িতে।

তাণ্ডবে ছাই বন কুমার শিব ও শংকর কুমার শিবদের ঘর।

চেয়ারম্যান বন কুমার শিবের ডুপ্লেক্স ভবনের পাশেই তার জ্ঞাতীদের বাড়ি। এ দুই বাড়ির প্রায় ১০টির মতো ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তপন বৈঞ্চব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাজার খানেক মানুষ স্লোগান দিতে দিতে চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা চালায়।

তারা প্রথমে এসে ইট ছুড়তে শুরু করে। এরপর ডুপ্লেক্স ঘরের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে লুটপাট করে। তারপর আগুন ধরিয়ে দেয়।

একইভাবে চেয়ারম্যানের বাড়ি লাগেয়া শংকর কুমার শিবদের বাড়িতেও ভাংচুর, লুটপাট ও আগুন লাগানো হয়।

প্রধান শিক্ষক ও চেয়ারম্যানের বাড়ি বাড়ি পোড়ানোর পর হামলাকারীরা যায় ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া ফ্রান্স প্রবাসীর বাড়িতে। ভাংচুরের পর আগুন দেওয়া সেখানেও। চলে লুটপাটও। এরপর পাশেই মনসা মন্দির ভাঙা হয়।

অচেনা লোক, সঙ্গে পেট্রোল

চেয়ারম্যানের ভাই শংকর কুমার শিব বলেন, “আমাদের বাড়িতে যারা হামলা চালিয়েছে, তাদেরকে আমরা চিনতে পারিনি। অপরিচিত লোক। অন্য এলাকা থেকে এসেছে।

“এদের কারও কারও পাঞ্জাবি, টুপি পরা থাকলেও প্যান্ট-শার্ট পরা লোকজনও ছিল।”

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন বলেন, হামলাকারীরা অপরিচিত হলেও গ্রামের কিছু মানুষ হামলাকারীদের সহায়তা করেছে। হামলাকারীদের যাতে প্রতিরোধ করা না যায় সে কাজও করেছে স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, “একদল হামলা ও লুট করছিল। কেউ ঠেকাতে আসলে তাদের বাধা দিচ্ছিল আরেক দল। এসময় দমকলের গাড়ি এসেও তাদের প্রতিরোধের মুখে ঘটনাস্থলে ঢুকতে পারেনি।”

বন কুমার শিবের প্রতিবেশী ৭৪ বছর বয়সী তোতা ভূইয়া বলেন, “অপরিচিত লোকজন হামলা চালিয়েছে। আমরা প্রতিরোধের চেষ্টা করেও পারিনি। তারা সংখ্যায় ছিল অনেক।”

বন কুমার শিবের ভাইয়ের ছেলে টিটন কুমার শিব বলেন, “হামলাকারীরা সঙ্গে করে পেট্রোল ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ নিয়ে এসেছিল। তারা চাদর ও অন্যান্য কাপড় টুকরো করে কেটে দলা পাকিয়ে পেট্রোলে ভিজিয়ে তারপর আগুন লাগিয়ে ঘরের ভেতর ছুড়তে থাকে।”

হামলা কতটা ভয়ঙ্কর ছিল এই কক্ষটিই তার সাক্ষ্য বহন করে। ছবি: রিয়াজুল বাশার

সোমবার চেয়ারম্যান বন কুমার শিবের বাড়িতে পারিবারিক অনুষ্ঠান ছিল। এ উপলক্ষে বেশকিছু আত্মীয়-স্বজনও এসেছিলেন বাড়িতে। লুটে নিয়ে যাওয়া হয় তাদেরও গহনা ও টাকা-পয়সা।

বন কুমার শিবের চাচার বাড়ির চিত্রও একই। কয়েকটি ঘর পুড়িয়ে খাক করে দেওয়া হয়েছে। লুটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সব গহনা, দামী জিনিসপত্র।

লুটের পর হামলাকারীরা হাতে সোনার বালা পরে দেখাতে দেখাতে যাচ্ছিলেন বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।

সবমিলিয়ে প্রায় ২০টি ঘর ও মন্দিরে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ফ্রান্স প্রবাসীর বাড়িতে চালানো তাণ্ডব।

পুলিশ দেরিতে এসেছিল বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করলেও বাঙ্গার বাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার তা অস্বীকার করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে গেছি। ফায়ার ব্রিগেডও এসেছে। আমরা গিয়েই তো আগুন নেভালাম।”

আগুন নেভানোর কথা বললেও আগুন জ্বালানো ঠেকাতে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন যে ব্যর্থ হয়েছিল, তা স্পষ্ট।

তাণ্ডবের পর গ্রামের স্কুলে পুলিশের অবস্থান।

আতঙ্কে হিন্দুরা

হামলার পর রোববার সন্ধ্যায়ই কোরবানপুর গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে হিন্দুদের আতঙ্ক কাটেনি।

সোমবার সরেজমিনে কোরবানপুর গ্রামে ঢোকার আগেই চোখে পড়ে পুলিশ, প্রশাসন, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মীদের গাড়ি।

ঘটনাস্থলে শত শত মানুষের ভিড়। আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও অনেক মানুষ এসেছেন দেখতে ও সহানুভূতি জানাতে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চেয়ারম্যান বন কুমার শিবের বাড়ির কাছে যেতেই তীব্র পোড়া গন্ধ। চেয়ারম্যানের ডুপ্লেক্স বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, ভবনের ১৬টি কক্ষের কোনোটিই অক্ষত নেই। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তছনছ করা আসবাব, কাপড়চোপড়। লুটে নেওয়ার পর ফাঁকা পড়ে রয়েছে পাল্লা ভেঙে ফেলা আলমারি।

হামলা কতটা ভয়ঙ্কর ছিল এই কক্ষটিই তার সাক্ষ্য বহন করে। ছবি: রিয়াজুল বাশার

হামলাকারীরা প্রায় প্রতিটি বাড়িরই বাসন, খাবার ও রান্নার পাত্র ফেলে দিয়েছে পাশের ভাগাড়ে। চেয়ারম্যানের ডুপ্লেক্স ভবন ছাড়াও তার আরও দুটি টিনের ঘর ও বাড়ির আঙিনায় একটি মন্দিরও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।  

হামলায় গৃহহীন হিন্দুরা পাশের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছেন।

টিটন শিব বলেন, “আমাদের থাকার জায়গাই তো নেই। নারী ও শিশুদের অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে আমরা রাতে জেগে জেগেই কাটিয়েছি।”

বৃদ্ধ তপন বৈঞ্চব বলেন, তার জীবনে তিনি কখনও কোরবানপুরে এরকম ভয়াবহ ঘটনা দেখেননি।

বয়ঃবৃদ্ধ তোতা ভূইয়া বলেন, “এতদিন ধরে আমরা সবাই মিলেমিশে আছি। আমাদের এলাকায় কখনও সাম্প্রদায়িক সমস্যা হয়নি। কিন্তু এরকম ঘটনা যারাই ঘটিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার।”

রক্ষা পায়নি বন কুমার শিবের বাড়ির ছাদের ফুলের টবও।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসহ বাঙ্গরাবাজার থানা এলাকার সব মন্দিরে র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারটি মামলা করা হয়েছে বলে বাঙ্গারবাজারের ওসি জানান।

এসব মামলায় প্রায় ৩০০ জনের নাম উল্লেখ করা ছাড়াও আরও পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।

এদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে ভাংচুর ও আগুন ধরানোর ঘটনায় জড়িত থাকায় সোমবার দুপুরে পাঁচজনকে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

তাদের মধ্যে হেলালউদ্দিন ও মো. এরশাদের এক বছর এবং শানু মিয়া, এনু মিয়া ও বাবু মিয়াকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

‘পরিকল্পিত-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

এই হামলাকে শুধু পরিকল্পিতই বলছেন না, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মনে করছেন চেয়ারম্যান বন কুমার শিব।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত হামলা। হামলার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে।”

তবে কারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয়ী বন কুমার শিব।

পাশের বাড়িতে বসা বিমর্ষ বন কুমার শিব।

তিনি বলেন, “আমি পরপর দুই বার চেয়ারম্যান হয়েছি। আমার এলাকার মুসলিম ভাইদের ভোটেই আমি নির্বাচিত হয়েছি।

“আমার বাড়িতে এরকম হামলা হবে, তার কোনো কারণ দেখছি না। তাই এটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়েছে আমার।”

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্ব ধইর ইউনিয়নে বাসিন্দাদের মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। আর কোরবানপুর গ্রামের ৩০ শতাংশ হিন্দু।

১৯৯৯ সালে বন কুমার শিবের বড় ভাই পূর্ব ধইরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে ঢাকায় নিজের ফোম কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যান তিনি।

ভাইয়ের ওই মৃত্যুকেও রহস্যজনক মনে বন কুমার শিব।

২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় দণ্ডিত বিএনপির শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ এক সময় মুরাদনগরের সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৮৬ সালের এমপি কায়কোবাদকে হারিয়ে ১৯৯১ সালে আসনটিতে এমপি নির্বাচিত হন বিএনপির রফিকুল ইসলাম মিয়া, সেবারও কায়কোবাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে কায়কোবাদ ফের এমপি হওয়ার পর ২০০১ ও ২০০৮ সালে তিনি এমপি হন বিএনপি থেকে। তারপর থেকে এই আসনে সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন।

মুরাদনগর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কোরবানপুরের এই তাণ্ডবের পেছনে সাবেক এক সংসদ সদস্যের স্বজনদের ইন্ধন থাকার সন্দেহ করছেন।