কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার দায় হেফাজতে ইসলামের ওপর ‘চাপিয়ে’ তাদের ‘ঘায়েল করার’ চেষ্টা হচ্ছে বলে মন্তব্য এসেছে ধর্মভিত্তিক এ সংগঠনের এক সংবাদ সম্মেলনে।
Published : 10 Dec 2020, 02:42 PM
ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনার সিসিটিভি ভিডিও এবং তার ভিত্তিতে কুষ্টিয়ার দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে গ্রেপ্তার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে আসা সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে হেফাজত ইসলামের ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের নায়েবে আমীর নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “দেশ বরেণ্য আলেমদের শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক উপদেশ এবং দাবিকে বিতর্কিত করার জন্য কুষ্টিয়ায় কে বা কারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমে একটি ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে।”
হেফাজত ইসলাম ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বা গোপন তৎপরতা পথ অনুসরণ বা অনুমোদন করে না’ দাবি করে নুরুল ইসলাম বলেন, “এটা জানা থাকার পরও সরকার, ক্ষমতাসীন দল ও সমর্থকদের মধ্যকার ইসলামবিদ্বেষী একটি মহল কুষ্টিয়ার ঘটনার দায় ওলামায়ে কেরাম ও হেফাজতের নেতৃবৃন্দের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের ঘায়েল করার অপচেষ্টা করছে।”
গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়।
একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মামুনুল হক প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।
এরপর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক মাহফিলে অংশ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া’ হবে।
পরে সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও দেখে কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাসউদ মাদ্রাসার দুেই ছাত্র এবং তাদের উসকে দেওয়ার অভিযোগে ওই মাদ্রাসার দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
যে মৌলবাদীরা জাতির পিতার ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালিয়েছে, তাদের হুঁশিয়ার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “যদি কেউ মনে করেন, তারা অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন, এটা তাদের ধারণার ভুল।”
ভাস্কর্য বিরোধিতা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় জুনাইদ বাবুনগরী ও মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ঢাকার আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ‘ভাঙচুরকারী ও ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে উসকানিদাতাদের’ বিরুদ্ধে সংবিধান এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এসেছে হাই কোর্ট থেকে।
কুষ্টিয়ার ঘটনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হেফাজতের নায়েবে আমীর নুরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কুষ্টিয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আমরা চাই। তবে সিসিটিভি ফুটেজ দেখা যায় চিকন দুজন মানুষ উঠেছে, কিন্তু ধরে আনল মোটা মোটা দাঁড়িওয়ালা দুজন। সুতরাং তদন্ত কীভাবে...? সিসিটিভি ফুটেজের দুজনকে উঠতে দেখা গেল, নামতে তো দেখা গেল না।"
সংগঠনের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ধোলাইপাড়ে নির্মিতব্য ভাস্কর্য নিয়ে দেশের সর্বত্র ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে যে কোনো প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি ‘ইসলামসম্মত নয়’ বলে সর্বসম্মত ফতোয়া প্রদান করা হয়েছে, যা একটি পত্র দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে।
“হেফাজতে ইসলাম ভাস্কর্য নির্মাণ বিষয়ে সরকারকে ইসলামের আকিদা, ঈমান ও শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে পৌত্তলিকতা প্রসারের রাষ্ট্রীয় গোমরাহির পথ পরিহার করার আহ্বান জানাচ্ছে।”
অন্যদের মধ্যে হেফাজতের উপদেষ্টা আবুল কালাম, আব্দুল হামিদ, আব্দুল আউয়াল, আহমদ আবদুল কাদের, অ্যাডভোকেট আব্দুর রাকিব, যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবীব, মামুনুল হক, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউল্লাহ আমিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।