দেশের বেসামরিক নাগরিকদের হাতে থাকা ‘মিলিটারি গ্রেডের’ উজি পিস্তলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকার ও আগ্নেয়াস্ত্র আমদানিকারকদের সভায়।
Published : 22 Nov 2020, 02:11 PM
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সভাপতিত্বে রোববার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই ‘আমদানি ও বিক্রয় সভা’ হয়।
পুলিশের মহা পরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্র আমদানিকারক ছয়টি কোম্পানির প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ আর্মস ডিলার অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ছয়জন প্রতিনিধি আজকের সভায় উপস্থিত ছিলাম। আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সভায় একটা কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে ওই অস্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে থাকবে কি থাকবে না।”
মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদরদপ্তর, পুলিশের বিশেষ শাখা এবং অস্ত্র আমদানিককারকদের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
গত ২০ অগাস্ট এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তারের পর দেখা যায়, তিনি একটি উজি পিস্তলের মালিক এবং সেটি লাইসেন্স করা।
বিষয়টি পুলিশের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে, কারণ নামে পিস্তল হলেও উজি পিস্তল আসলে অতি ক্ষুদ্র আকারের সাব মেশিনগান।
শুরুতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহার করলেও পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানি লাইসেন্স নিয়ে উজি সিরিজের বিভিন্ন আগ্নোয়াস্ত্র তৈরি শুরু করে। বাংলাদেশে পাওয়া অস্ত্রটি তৈরি করেছে বিখ্যাত জার্মান অস্ত্র নির্মাতা কার্ল ওয়ালথার।
পরে জানা যায়, ছয়টি প্রতিষ্ঠান গত পাঁচ বছরে এ ধরনের মোট ১১১টি আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করেছে। সবগুলোই আনা হয়েছে পয়েন্ট টু টু বোরের ‘রাইফেল’ ঘোষণা দিয়ে। এর ৪৯টি বিক্রিও হয়ে গেছে। যদিও কোনো মডেলের উজি তাদের আমদানি বা বিক্রি করতে পারার কথা নয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, প্রথম উদ্ধার করা অস্ত্রটির ধরন দেখে সন্দেহ হওয়ায় মতামত নিতে সেটি ঢাকা সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল।
পরে সেনাবাহিনীর প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ত্রের লাইসেন্সে পয়েন্ট টু টু বোর লেখা থাকলেও সেমিঅটোমেটিক উজি পিস্তল কেনা যাবে না। এর এক ম্যাগাজিনে ২০ রাউন্ড গুলি থাকে, যেখানে সাধারণ পিস্তলে থাকে ১৫ রাউন্ড।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শঙ্কা, ‘মিলিটারি গ্রেডের’ সেমি অটোমেটিক এই আগ্নেয়াস্ত্র সাধারণ মানুষের হাতে থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সে কারণে এসব অস্ত্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাটি হয়।
যে ৪৯টি উজি পিস্তল বেসামরিক নাগরিকদের কাছে বিক্রি হয়েছে, তার মধ্যে কেবল একটি উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাকি ৪৮টি কাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে তার একটি তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকার ১২ জন ঢাকা মহানগরীর, বাকিরা বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।”
এই ৪৮ জনের ব্যাপারে তথ্য জানাতে গত সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত জবাব আসেনি বলে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।