দুর্নীতির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওএসডি হওয়ার পর ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া দাবি করেছেন, তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থক এক চিকিৎসক নেতার ‘ষড়যন্ত্র’র শিকার হয়েছেন।
Published : 05 Nov 2020, 08:30 PM
নিজের বিদায় উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই দাবি করেন।
ডা. উত্তম বড়ুয়া দাবি করেন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) গত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে।
যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৯ অক্টোবর উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। এরপর গত ৩ অক্টোবর পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
ডা. উত্তম কুমার অভিযোগ করেছেন স্বাচিপের মহাসচিব ডা. এম আজিজের বিরুদ্ধে। তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সনাল ও ডা. আজিজ নেতৃত্বাধীন স্বাচিপের বর্তমান কমিটিতে যুগ্ম-মহাসচিব পদে আছেন ডা. উত্তম কুমার।
তিনি বলেন, স্বাচিপের গত নির্বাচনে তিনিও মহাসচিব প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাকে যুগ্ম মহাসচিব পদে রেখে কমিটি করে দিলে তা মেনে নেন তিনি।
“গত তিন বছর একটি শব্দ, একটি লাইন, একটি কথা আমি মহাসচিবের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করিনি। আমি কথা বললে তারা মনোক্ষুণ্ন হতে পারেন, এ কারণে আমি কোনো বৈঠকে যাইনি।
“কিন্তু আমার এই মহাসচিব হিংসায়… আমাকে ছাড়েননি। আজকে যা কিছু দেখছেন আমি স্পষ্টভাবে বলছি তারই নেতৃত্বে হচ্ছে। তার কিছু প্রেতাত্মা আমার হাসপাতালে আছে। এই প্রেতাত্মারা জড়িত।”
নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত দাবি করে তিনি বলেন, “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বলব, আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে চাচ্ছে, আমাকে চোর বানাতে চাচ্ছে। আমি চোর না, আমি দুর্নীতিবাজ না। প্রমাণ করুন, প্রমাণ করে তারপর বলুন আমি দুর্নীতিবাজ।”
ডা. উত্তমের অভিযোগের বিষয়ে ডা. আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে যাব কোন দুঃখে? তার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই।
“এখন একটা শুদ্ধি অভিযান চলছে। তার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ তদন্ত করে প্রক্রিয়া অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। এখানে তো আমার কিছু করার নেই।”
বেলা সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া মতবিনিময় সভা চলে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। এতে হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। বিপুল উপিস্থিতির কারণে সম্মেলন কক্ষের বাইরেও বসার ব্যবস্থা করা হয়। দোতলায় এবং হাসপাতালের প্রবেশপথে দুটি বড় ডিসপ্লেতে সভা প্রদর্শন করা হয়।
বিদায় উপলক্ষে মতবিনিময় সভা বলা হলেও চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উত্তম কুমার বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে বক্তব্য দেন।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জাকির হোসেন উকিল বলেন, “এই ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত, ব্যথিত। আমরা আমাদের অভিভাবককে হারাতে চাই না। আমরা কোথাও যেতে দিতে পারি না। এজন্য আমরা চাই, এই বদলি আদেশ বাতিল করা হোক। স্যারকে আগের জায়গায় বহাল রাখা হোক।”
প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, উত্তম কুমার দায়িত্ব নেওয়ার পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে চারবার সেরা নির্বাচিত হয়েছে।
“এই হাসপাতাল ছিল ময়লার ভাগাড়। সেখান থেকে আজকের অবস্থানে এনেছেন তিনি। এই কৃতিত্ব উত্তম কুমার বড়ুয়া স্যারের। তার গুণগান বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের সবাইকে এক হতে হবে। আন্দোলন ছাড়া কোনো দাবি আদায় করা যায় না।”
হাসপাতালের উপ-পরিচালক কে এম মামুন মোর্শেদ বলেন, “যার হাত ধরে এই হাসপাতাল আজকের অবস্থানে এসেছে, একটা আদেশেই তাকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
“এ ধরনের আদেশ খুবই লজ্জাজনক, ন্যক্কারজনক। আমি অবিলম্বে এই আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাই। আমরা মনে করি, এখানে কোনো ষড়যন্ত্র চলছে। কে এই ষড়যন্ত্রকারী, তা খুঁজে বের করতে হবে।”
১৯৯৭ সাল থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন উত্তম কুমার বড়ুয়া। মেডিকেল অফিসার থেকে পদোন্নতি পেয়ে এই হাসপাতালের পরিচালক হন তিনি। ২০১৫ সাল থেকে তিনি পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।