বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধে আদালতের রায় ও আদেশ বাস্তবায়ন না করায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানকে সতর্ক করেছে হাই কোর্ট।
Published : 14 Sep 2020, 08:06 PM
আদালত বলেছে, বার বার সময় নিয়ে রায় বাস্তবায়ন না করে তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছেন। ওয়াসার এমডি ইচ্ছাকৃতভাবে রায় প্রতিপালন করছেন না এবং বার বার এভিডেভিড দিয়ে সময় ক্ষেপণ করছেন।
পরে আদালত তাকসিম খানকে সর্তক করে দিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে রায় ও আদেশের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
আগামী ১৮ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য তারিখ রেখেছে আদালত।
আদালতে রিট আবেদনকারী এইচআরপিবির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী আমাতুল করিম এবং ওয়াসার এমডির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী উম্মে সালমা।
বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে এইচআরপিবি ২০১০ সালে এই রিট আবেদন করে।
চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১ জুন তিন দফা নির্দেশনাসহ রায় দেওয়া হয়।
এর মধ্যে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং বুড়িগঙ্গা নদীতে সংযুক্ত সব পয়ঃপ্রণালির লাইন (সুয়ারেজ) ও শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশনা রয়েছে।
ওইসব নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত বছরের ৩০ এপ্রিল সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ৪ মার্চ তাকসিম খান আদালতে হাজির হয়ে রায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তীকালে ১৮ আগস্ট ও ৭ সেপ্টেম্বর ওয়াসার পক্ষ থেকে আরও দুটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হলেও আদালত তা গ্রহণ করেনি। প্রতিবেদনে রায় ও আদেশ বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না থাকায় তা গ্রহণ করেনি আদালত।
“আজ শুনানিতে ওয়াসার এমডির পক্ষে আরও একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হলে আদালত তা গ্রহণ না করে তাকে সতর্ক করেছেন।”
ওয়াসার সর্বশেষ প্রতিবেদনটি (যেটি সোমবার আদালতে উপস্থাপন করা হল) কেন গ্রহণ করেনি আদালত- জানতে চাইলে মনজিল মোরসেদ বলেন, আগে দুইবার প্রতিবেদন দেওয়ার পর রায়ের অদেশ বাস্তবায়নের জন্য ওয়াসাকে এক সপ্তাহ করে দুইবার দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছে আদালত।
“আর আজকে যে প্রতিবেদনটা উপস্থাপন করা হয়েছে সেটাতে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গার সাথে সংযুক্ত হাজারীবাগের চারটি শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন তারা বিচ্ছিন্ন করেছে। আর শ্যামপুর নিয়ে বলা হয়েছে যে, শ্যামপুরে বন্যা আছে। আর তাদের চারজন কর্মকর্তা কোভিড আক্রান্ত। কিন্তু সেই কর্মকর্তারা কোথাকার সে বিষয়ে কিছু বলা নাই।
“আমরা এই প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়ে বললাম, যদি ধরেও নেই তার মধ্যে চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে তথ্য দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে? তাছাড়া শ্যামপুরে তো এখন বন্যা নাই। এরপর আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে উষ্মা প্রকাশ করেছেন এবং ওয়াসার এমডিকে সতর্ক করে দিয়েছেন।”
এদিকে একই আদালত এ সংক্রান্ত আরেকটি রিট মামলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কেরানীগঞ্জ থানার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়ে বলেছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ পাশে নদী ও নদী তীরে ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য ফেলা ও স্তূপ করা বন্ধ করতে।
মনজিল সোরসেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য ফেলা হয়েছে তা অপসারণ করে ১৫ দিনের মধ্যে আদেশের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।”
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য তারিখ রাখা হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।
এ মামলায় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম খানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল বিচারাধীন।
বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধে আদালতের রায় ও আদেশ বাস্তবায়ন না করা, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে আদালতের স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটানো এবং আদালত অবমাননার অভিযোগে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চেয়ে গত ২৩ জানুয়ারি রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট।