বরিশালের উজিরপুরে নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ, যিনি বেশ কিছু দিন ধরে ফেইসবুকে হতাশাজনক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন।
Published : 17 Aug 2020, 05:32 PM
ইমাম হোসেন নামের ওই তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের (সেশন ২০১৮-১৯) ছাত্র ছিলেন। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজেদের ঘরে রশিতে ঝুলে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে তার মামাতো ভাই মো. আখতার হোসেন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ইমাম হোসেনের বাবা তোতা চৌকিদারকে ফোন করা হলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলের মৃত্যুতে হতবিহ্বল এই বাবা কোনো কথা বলতে পারেননি।
তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান জানিয়েছেন।
ইমাম হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদদীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পর থেকে তিনি উজিরপুর থানার গাজীরপাড় গ্রামে নিজেদের বাড়িতেই ছিলেন।
আত্মহত্যার আগে রোববার রাত ২টা ১৭ মিনিটে ইমাম হোসেন তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে ‘আল-বিদা’ লিখে একটি পোস্ট দেন। তবে তার আগে প্রায় এক মাস ধরেই তিনি তার ফেইসবুকে আত্মহত্যা নিয়ে বেশ কয়েক বার পোস্ট দিয়েছেন।
“ইদানীং আত্মহত্যা একটা আর্ট হয়ে গেছে। কে কতটা শৈল্পিকভাবে সত্তা ঝুলিয়ে দিতে পারে।”
“তোমাকে পাবো পাবো বলেই আত্মহত্যার তারিখটা পিছিয়ে দিই।”
“পৃথিবীজুড়ে শুধু লাশের গন্ধ পাচ্ছি!”
“আহা! যদি মৃত্যুর পর মানুষ দেখিতে পারিত তাঁহার মৃত্যুতে কার কতটুকু আহাজারি কিংবা সুখবোধ।এ স্বাদ আস্বাদনের জন্য হলেও ‘মৃত্যু প্রযোজ্য’।”
“অনিয়ম অবিচারের রোষানলে পড়ে যদি আমার মৃত্যু হয় তবে তার দায়ভার কে নিবে?”
“ঝুলে আছে সত্তা, মানুষ তার নাম দিয়েছে আত্মহত্যা।”
তিনি বলেন, “আত্মহত্যার সময় তার বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। তারা উজিরপুর ছিলেন। গতকাল রাতেও সে বাড়িতে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খেয়েছে। সকালে বাজারে গিয়েছে, মোবাইলে টাকা পুরে অনেকের সাথে কথা বলেছে। কিন্তু হঠাৎ করে সে এ কাজ করবে কেউ ভাবেনি।”
গত এক মাস ধরে ফেইসবুকে তার হতাশাজনক পোস্ট তাদের নজরে এসেছিল কি না জানতে চাইলে আখতার বলেন, “বিষয়টা আমাদের অনেকের নজরে এসেছিল। কিন্তু বাবা-মা তো এসব বুঝেন না। আর কেউ ভাবেনি ইউনিভার্সিটিপড়ুয়া একটা ছেলে এ কাজ করবে।”
এ বিষয়ে একই এলাকার ইমামের বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মনির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক দিন ধরে প্রেমঘটিত সমস্যা নিয়ে ইমাম ডিপ্রেশনে ছিল। আমরা তাকে বিষয়টি বার বার বুঝেয়েছি। কিন্তু অবশেষে সে আর আমাদের কথা রাখল না।”
“এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এভাবে একটা মেধাবী ছাত্র চলে যাবে! কোনো সমস্যা থাকলে সে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারত।”
এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি একটি মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক ঘটনা। আমরা খুবই শোকাহত। আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের এখন বেঁচে থাকার সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের সমস্যা শেয়ার করা ও পরামর্শের অনেক জায়গা রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য নয়।”