‘কূটনৈতিক দায়মুক্তি না থাকলে আটক হতেন রাষ্ট্রদূত কালামও’

অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার শহিদ ইসলাম পাপুলের ঘটনায় সে দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালামেরও সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত করে বক্তব্য দিয়েছেন উপসাগরীয় দেশটির একটি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার প্রধান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2020, 06:47 PM
Updated : 12 July 2020, 06:51 PM

রোববার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় কুয়েত ট্রান্সপারেন্সি সোসাইটির (কেটিএস) চেয়ারপার্সন মাজিদ আল মুতাইরি বলেন, “কূটনৈতিক দায়মুক্তি না থাকলে হয়ত কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকেও আটক করা হত।”

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে রাখা হয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে।

রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম

এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু হলেও সেসময় দূতাবাস থেকে ঢাকায় চিঠি পাঠিয়ে ওই বিষয়ে সঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

পাপুলের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের সংশ্লিষ্টতার খবর প্রকাশ করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে বিপদের মুখে পড়তে হয় বলেও গণমাধ্যমে এসেছে।

পাপুলের মদদদাতা হিসাবে রাজনীতিক থেকে কূটনীতিক বনে যাওয়া আবুল কালাম নিয়ে যে সব খবর প্রকাশিত হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রদূত কালাম দেশে ফিরে আসছেন বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৭ জুলাই জানিয়েছিলেন।

পাপুলকাণ্ডে জড়িত হিসাবে এখন পর্যন্ত তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়েছে কুয়েতের দুইজন সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজনকে। গ্রেপ্তার হয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহ।

এমন প্রেক্ষাপটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সঙ্গে তার সংগঠনের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তব্য রাষ্ট্রদূত কালামের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বক্তব্য দেন কেটিএস চেয়ারপার্সন।

পাপুলকাণ্ডে কুয়েতের সংসদ সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয় তুলে ধরে সেমিনারে দেশটির জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য হাস্সান জোহার বলেন, “দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বে নিয়োজিতরা সুস্পষ্টভাবেই ব্যর্থ হয়েছে।

”আইনি প্রক্রিয়ায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করে গুরুত্বপূর্ণ এ খাতের পুরো ব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামো জোরদার করতে হবে।”

একই অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক মানব ও অর্থ পাচারের ঘটনায় কুয়েতি নাগরিক ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশের সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরে কুয়েত ইউনিভার্সটির ল স্কুলের ড. দালাল আল সাইফ বলেন, “কুয়েতে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার অপরিহার্য।”

‘আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন চুক্তি’ বিষয়ক জাতিসংঘের কনভেশন বাস্তবায়নে কুয়েতের ফৌজদারি আইনের ঘাটতি সম্পর্কে এ সময় আলোচনা করেন দালাল।

কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “কুয়েতে আটক বাংলাদেশি সংসদ সদস্য ছাড়াও গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের একাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অর্থ ও মানব পাচার, মাদক ব্যবসা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ক্যাসিনো ব্যবসা ও নানা অবৈধ পন্থায় অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ দুর্নীতির নানা অভিযোগ আছে।”

এমপি পাপুলের আটক হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য ’অত্যন্ত বিব্রতকর’ অভিহিত করে তিনি বলেন, “দেশ ও সংসদের মর্যাদা রক্ষার স্বার্থেই কুয়েতে অভিযুক্ত বাংলাদেশি সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দেশেও দ্রুত ও কার্যকর তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।”

ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মানীয় সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “দুর্নীতিও কোভিডের মতই এক ধরণের ভাইরাস। উৎস থেকেই এই ভাইরাস নির্মূল করতে না পারলে সাধারণ জনগণও দুর্নীতিতে আক্রান্ত ও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

”তাই উৎস থেকেই দুর্নীতি নির্মূলে তৎপর হতে হবে। এজন্য কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না।”

অর্থ ও মানব পাচার বন্ধে সম্মিলিত ও আন্তঃদেশীয় প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারপার্সন ডেলিয়া ফ্যারাইরা রোবিও সেমিনারে বলেন, “দুর্নীতি প্রতিরোধে সঠিক নীতিকাঠামো ও আইন এবং সেগুলোর যথাযথ ও কঠোর বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ জরুরি। বিশেষ করে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সকল প্রকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে।

”এজন্য কর্তৃপক্ষের আইনি ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে হবে।”

কুয়েত ট্রান্সপারেন্সি সোসাইটির (কেটিএস) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আসরার হায়াত সেমিনার সঞ্চালনা করেন।