রিমান্ডে ‘তিন কুয়েতিকে ঘুষের তথ্য’ দিয়েছেন পাপুল

বাংলাদেশের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুল মানবপাচার ও অর্থপাচারে সহযোগী হিসেবে পাওয়া কুয়েতের দুই সরকারি কর্মকর্তাসহ তিনজনকে ‘ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে’ রিমান্ডে কী বলেছেন, সেই খবর এসেছে আরবের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2020, 03:20 PM
Updated : 16 June 2020, 03:20 PM

সরকারি কৌঁসুলির বরাত দিয়ে কুয়েতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, সে দেশের দুই কর্মকর্তাকে চেক ও নগদে ২১ লাখ দিনার দেওয়ার কথা রিমান্ডে স্বীকার করেছেন পাপলু।

মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যরা পাপুলের কুয়েতি মদদদাতাদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে মুখ খোলেননি সরকারি কৌঁসুলিরা।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের কুয়েতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে বাংলাদেশের সংসদ সদ্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। আটকের পরদিন থেকে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের এই এমপি রিমান্ডে যা বলেছেন, তা প্রসিকিউটরদের বরাতে প্রকাশ করছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। 

এর মধ্যে আরব টাইমস ও আল-রাইয়ের খবরে বলা হয়, পাপুলের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণকারীদের একজন কুয়েতের একটি মন্ত্রণালয়ের পরিচালক, একজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং একজন কুয়েতি নাগরিক।

আরব টাইমস লিখেছে, মন্ত্রণালয়ের ওই পরিচালক যেদিন ঘুষের টাকা নিতে পাপুলের মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপের কার্যালয়ে গিয়েলিছেন, সেদিন ওই কর্মকর্তার অনুরোধে সেখানে কর্মরত সব কুয়েতি নাগরিককে ছুটি দেওয়া হয়েছিল।

”কারণ ওই কর্মকর্তা চাননি, কুয়েতিদের কেউ তাকে দেখে চিনে ফেলুক। ওই অবস্থায় এসে তিনি নগদ অর্থ গ্রহণ করেন।”

তবে এই পরিচালককে বাংলাদেশি সাংসদ কী পরিমাণ ঘুষ দিয়েছেন, তা জানাতে পারেনি কুয়েতি সংবাদমাধ্যম।

তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমলাকে পাপুল চেকের মাধ্যমে ১১ লাখ এবং নগদে ১ লাখ দিনার দেওয়ার কথা তদন্তকারীদের কাছে স্বীকার করেছেন বলে খবর দিয়েছে কয়েকটি পত্রিকা।

সেসব খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা পাপুলকে তার অর্থপাচারে সহায়তা করতেন। তাকে দেওয়া একটি চেকের কপিও হাতে পেয়েছেন সরকারি কৌঁসুলিরা।

এছাড়া বাংলাদেশিদের আনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য অন্য একজন কুয়েতি নাগরিককে পাপুল ১০ লাখ দিনার দিয়েছেন বলে আল-রাই পত্রিকার খবরে জানানো হয়েছে।

এদিকে পাবলিক প্রসিকিউশনের তদন্তের পাশাপাশি কুয়েতের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ’নাজাহা’ পাপুলের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছে কুয়েত টাইমস।

এর আগে পাপুলের অপরাধযজ্ঞে মদদদাতা হিসাবে সাতজনকে চিহ্নিত করার কথা তদন্তকারীদের বরাতে জানিয়েছিল কুয়েতি গণমাধ্যম। তাদের মধ্যে কুয়েতের দুইজন বর্তমান এবং একজন সাবেক পার্লামেন্ট সদস্যও রয়েছেন।

পাপুলের ঘটনায় জড়িত কোনো কুয়েতির নাম এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেননি তদন্তকারীরা। এ কারণে তাদের নাম দ্রুত প্রকাশ করে বিচারের আওতায় আনার দাবি উঠেছে দেশটিতে।

সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।

প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে।

পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশি কমিউনিটির ধারণা।

কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সেবা খাত, নিরাপত্তা, নির্মাণ, আবাসন, পরিবহন, তেল শোধন প্রভৃতি খাতে কার্যক্রম রয়েছে মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপের। কুয়েতের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ব্যবসা রয়েছে তাদের।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কুয়েত প্রতিনিধি আ হ জুবেদ]

আরও পড়ুন