পাপুলকে নিয়ে কঠোর অবস্থানে কুয়েত

অর্থপাচার ও মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কুয়েত সরকার।

মাসুম বিল্লাহ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2020, 04:19 PM
Updated : 14 June 2020, 08:41 PM

গ্রেপ্তারের পর থেকে তাকে টানা আট দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন বিভাগ।

পাপুলকে গ্রেপ্তারের পর তদন্ত চলার মধ্যে এটিকে ‘সবচেয়ে বড়’ মানবপাচারের ঘটনা হিসাবে বর্ণনা করেছেন কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী আনাস আল-সালেহ।

পাপুলের ‘অর্থপাচার ও মানবপাচারের’ সঙ্গে কুয়েত সরকারের কারও বিরুদ্ধেও যদি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আল-সালেহ এক টুইটে বলেছেন, ”বিগত কয়েক সপ্তাহে অভিবাদন পাওয়ার মতো কাজ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা। যেটা একজন এশীয় অভিবাসীর মাধ্যমে সবচেয়ে বড় মানব পাচারের ঘটনা প্রকাশ করেছে।

”তদন্তে সন্দেহভাজন আর্থিক লেনদেনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। কর্মকর্তা ও কোম্পানিগুলোর একটি নেটওয়ার্ক এ কাজে সহযোগিতা করেছে।”

তিনি বলেন, “তদন্তে যাদের নাম আসবে, হয়ত তারা সরকারি কর্মকর্তা কিংবা বিশিষ্ট কেউ, তাদেরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারীদের মুখোমুখি হতে হবে। যদি কারও সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়, বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করতে তাদের পাবলিক প্রসিকিউশনে পাঠানো হবে।”

কুয়েতের রাজনীতিতেও পাপুলের গ্রেপ্তারের বিষয়টি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।

পাপুলের অর্থপাচার ও মানবপাচারের সঙ্গে মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন পার্লামেন্ট সদস্য আবদুল করিম আল-কানদারি।

এক টুইটে তিনি বলেছেন, ”কেবল বাংলাদেশি এমপির নাম প্রকাশ করলে হবে না, যারা তাকে সহযোগিতা করেছে কুয়েতের প্রতিনিধি কিংবা সরকারি কর্মকর্তা সবার নাম প্রকাশ করতে হবে। কারণ ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির কারণে এটা মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পাপুলকে। দেশটির পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট এই ব্যবসায়ী মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির মালিকদের একজন।

তাকে গ্রেপ্তারের পর কুয়েতি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, পাঁচ বাংলাদেশির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।

ওই ব্যক্তিরা প্রসিকিউশনকে জানিয়েছিল, তিন হাজার কুয়েতি দিনার খরচ করে পাপুলের মাধ্যমে সেদেশে গিয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, ভিসা নবায়নের জন্য ফি বছর টাকা দিতে হয় তাদেরকে।

আটকের পরদিন থেকে পাপুলকে জামিন না দিয়ে রিমান্ডে দেয় কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন বিভাগ। এরই মধ্যে অভিযোগ সম্পর্কে ১১ জন ব্যক্তির সাক্ষ্য নিয়েছেন নিয়েছেন তদন্তকারীরা।

আটক করা হয়েছে পাপুলের প্রতিষ্ঠান মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মুর্তজা মামুনকে। তদন্ত চলার মধ্যে পাপুলের কুয়েতের বাসায় অভিযান চালিয়ে চেক জব্দ করার পাশাপাশি অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়ার খবর দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।

সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।

পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির ধারণা।

কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সেবা খাত, নিরাপত্তা, নির্মাণ, আবাসন, পরিবহন, তেল শোধন প্রভৃতি খাতে কার্যক্রম রয়েছে মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপের। কুয়েতের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ব্যবসায় রয়েছে তাদের।

তাকে আটকের পরদিন বিষয়টি নিয়ে কুয়েত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছিল সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস; এখনো সেটির উত্তর আসেনি বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম।