গলি থেকে রাজপথ ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টায় সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটিতে গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগে ঢাকার রাজপথে বেড়ে গেছে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত (সাধারণের কাছে অটো হিসেবে পরিচিত) রিকশা। দুর্ঘটনার ঝুঁকি সত্ত্বেও মানুষজনও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে এসব বাহনে উঠছেন।

সুমন মাহমুদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2020, 12:14 PM
Updated : 17 May 2020, 12:14 PM

নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যাটারিচালিত রিকশা কখনই বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকার অলিগলিতে এসব রিকশার চলাচল ছিল বাধাহীন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাঝে মাঝে বন্ধ থাকলেও কিছুদিন পর আবার বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়।

তবে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ‘সাধারণ ছুটিতে’ গণপরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে পেটের দায়ে অনেক চালক গলি ছেড়ে রাজপথে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন।পুলিশ মাঝেমধ্যে ধরপাকড় করলেও পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।

রোববার সকাল ১১টায় মালিবাগের বাসিন্দা আবদুস সোবহান নতুন বাজার যাওয়ার জন্য ব্যাটারির রিকশা ভাড়া করেন ৮০ টাকায়।

দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকলেও এই রিকশায় যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “সামাজিক দূরত্ব মেনে আমি ২৫/৩০ মিনিটে নতুন বাজার যেতে পারব। আর পায়েচালিত রিকশায় নতুন বাজার যেতে লাগবে এক ঘণ্টার উপরে। দ্রুত যাওয়ার জন্যই অটোতে উঠেছি।।

“জানি দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে, সেজন্য সাবধানে থাকতে হয়। কিন্তু কিছু করার নেই, দ্রুত কাজ করতে হবে। কারণ লকডাউনে তো পেট মানে না।”

আবদুস সোবহানকে বহন করা রিকশার চালক হাবিব লালবাগের কামরাঙ্গীরচরে থাকেন। আগে প্যাডেলের রিকশা চালালেও যাত্রীদের চাহিদা বেশি দেখে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছেন।

তিনি জানালেন, গণপরিবহন না থাকায় অলিগলি ছেড়ে বড় রাস্তায় এসেছেন। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয় থাকলেও আয়-রোজগার ভালোই হচ্ছে। মালিকের জমা ১৫০ টাকা দিয়ে দিনে ৩০০-৩৫০ টাকা থাকে।

অবৈধ রিকশা কেন চালান কেন জানতে চাইলে হাবিব বলেন, “স্যার এক মাস ঘরবন্দি। পেটে ভাত কে জোগাইব? আগে রিকশা চালাইতাম। এখন দেখি সারাদিনে রিকশায় যাত্রী পাওয়া যায় না সেইভাবে, তাই অটোতে কিছুটা আশা দেখি।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে বাটারিচারিত রিকশায় করে সেগুনবাগিচা যাচ্ছিলেন স্কুল শিক্ষক মোবারক হোসেন।

তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নেই, তারপরও দেদারছে চলছে তারা। কি করবে মানুষজনের তো চলতে হবে। বাধ্য হয়ে দ্রুত যেতে এই যানে উঠছে। সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া বেশি। প্রেস ক্লাব থেকে ধানমন্ডি যাবেন অটোতে ৫০ টাকায় আর সিএনজিচালিত গাড়িতে ১৫০ টাকা চায়।”

রোববার সকাল ১১টার দিকে মালিবাগ মোড়ে পেট্রোল পাম্পের সামনে ২০/২২টি প্যাডেলচালিত রিকশার সঙ্গে ডজনখানেকের বেশি ব্যাটারি রিকশা দেখা গেছে।

সেখানে প্যাডেল রিকশার চালক জব্বার আলি বলেন, যাত্রীদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেক মালিকই রিকশায় ব্যাটারি লাগাচ্ছেন।

তবে ব্যাটারিচালিত রিকশায় দুর্ঘটনা আকছার নিজের চোখেই দেখেন বলে জানান জব্বার আলি।

অবৈধ এসব রিকশার চলাচল বেড়ে যাওয়ায় মহামারীর মধ্যেও তৎপর হয়েছে পুলিশ।

রোববার হাই কোর্টের সামনে কদম ফোয়ারা, গুলিস্তান, মৌচাক মোড়সহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করতে গেছে পুলিশকে।

জাতীয় প্রেস ক্লাব ও গুলিস্তানের সামনে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব রিকশার সিটি করপোরেশনের কোনো অনুমোদন নেই, রাস্তায় চলছে অবৈধভাবে।

তাই তারা এসব রিকশা পেলেই আটক করছেন।