জালিয়াতি করে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়া নথিতে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর এবং প্রজ্ঞাপন জারির পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের চেয়ারে দুই দিন বসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আব্দুস সামাদ আজাদ।
Published : 12 May 2020, 11:29 PM
জালিয়াতির ঘটনা ধরা পরে ওই প্রজ্ঞাপন বাতিলের পর তিনি আর সেখানে যাননি।
তেজগাঁও থানার আলোচিত এই প্রতারণার মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা এসব তথ্য পেয়েছেন।
পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রুবাইয়াত জামান মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নথি বের হওয়ার পর তা ‘টেম্পারিং করে’ আব্দুস সামাদ আজাদের নামের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ফাইল যায়। যথারীতি সেখান থেকে অনুমোদন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আজাদের পক্ষে অফিস আদেশ বের হলে সেই আদেশ নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে যোগদানও করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আদেশ বাতিল হয়।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিকুল ইসলাম মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আব্দুস সামাদ আজাদ মার্চ মাসের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন।
“তিনি সম্ভবত একদিন চেয়ারে বসেছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নথি তার কাছে উপস্থাপন করা হয়নি বা কোথাও কোনো স্বাক্ষর করেননি।
“সব কিছু বুঝে উঠার আগে দুই দিন পরেই কোষাধ্যক্ষ পদে তার নামে যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে বলে আরেকটি চিঠি আসে। এরপর তিনি আর আসেননি।”
এখনও ওই পদে নতুন কাউকে নিয়োগের আদেশ হয়নি বলে জানান তিনি।
নর্থ সাউথে দুই দিন অফিস করার কথা স্বীকার করেছেন আব্দুস সামাদ আজাদও।
তিনি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে যোগদান করেছেন এবং দুই দিন অফিস করেছেন।
“তবে জালিয়াতির ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।”
এই মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারাই এ কাজ করার কারণ বলতে পারবেন বলে দাবি করেন তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা রুবাইয়াত জামান বলেন, মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে অনেক তথ্য সামনে আসছে। সব কিছু যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে আব্দুস সামাদ আজাদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। সর্বশেষ সোমবার ফরহাদ ও নাজিম উদ্দিন মহানগর হাকিমের কাছে জবানবন্দি দেন। পরে ওই দিনই তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নাজিম উদ্দিন বিনিয়োগ বোর্ডে যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ছিলেন। গত বছর প্রেষণে তাকে বিনিয়োগ বোর্ডে পাঠানো হয়।
“প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকার সময় তরিকুলের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তার মাধ্যমে তরিকুল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একাধিকবার গেছে,” বলেন রুবাইয়াত জামান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতে সর্বশেষ যে দুইজন স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন তার মধ্যে নাজিম উদ্দিন স্বীকার করেছেন, এই কাজের জন্য তরিকুলের কাছ থেকে সে দেড় লাখ টাকা পায়।
“তরিকুল লোক ম্যানেজ করেছে আর নাজিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা হিসাবে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এর বিনিময়ে কিছু টাকা পেয়েছে নাজিম উদ্দিন “
ছাত্রলীগ নেতা তরিকুল এ ধরনের কাজ আরও করেছেন কি না বা এই কাজের জন্য কোনো টাকা লেনদেন হয়েছে কি না তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানান রুবাইয়াত জামান।
তিনি বলেন, “তরিকুল অত্যন্ত চালাক। কথা বলতে চায় না। আমরা সব তথ্য- প্রমাণ যোগাড়ের চেষ্টা করছি।”
গ্রেপ্তার হওয়ার পর ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত তরিকুল ইসলাম মুমিন এখন রিমান্ডে আছেন। বুধবার তার রিমান্ড শেষে আদালতে তোলা হবে। তাকে আরও রিমান্ডে চাওয়া হবে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নথি বের হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানোর আগে ফরহাদ- তরিকুলের কাছে ফাইলটি পৌঁছে দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমা। এই ফাইলটি ছিঁড়ে সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়ার পর আবার সেই ছেঁড়া ফাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢোকাতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়ে চক্রটি।
“প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আবারও একটি ফাইল এনে বাণিজ্য মেলার মাঠের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই ফাইলে ঢুকানো হয় সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়া নথিটি। আর শুধু নতুন এই ফাইলের জন্য তরিকুলকে বাড়তি ৫০ হাজার টাকা গুণতে হয়। তবে নতুন এই ফাইলটি কে এনে দিয়েছিল বা টাকা কাকে দেওয়া হয়েছিল তা জানা যায়নি।”
ঘটনার সব কিছুর তথ্য প্রমাণ যোগাড়ের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা রুবাইয়াত।