বেতনের জন্য প্রতিদিন রামপুরা ও মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় পোশাক কারখানাগুলোর সামনে ভিড় করা কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেছেন, মাসের অর্ধেক চলে গেলেও বেতন না হওয়ায় খাবার যোগাড় করা নিয়েই মুশকিলে পড়েছেন তারা।
Published : 16 Apr 2020, 05:51 PM
এদিকে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকার থেকে ত্রাণ দেওয়া হলেও তা তারা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন এই পোশাক শ্রমিকরা।
“বেতন পাই না। রিলিফও পাই না। আমারা যেখানে থাকি হেখানে কিছু কিছু লোককে বাইছা বাইছা রিলিফ দিয়া যায়, আমাগো দেয় না,” দুঃখ করে বলেন রামপুরার বাসিন্দা কিশোরী আলেয়া।
বৃহস্পতিবার সকালে রামপুরা ও মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার কাছে কয়েকটি বন্ধ পোশাক কারাখানার সামনে নারী কর্মীদের বেতনের আশায় বসে থাকতে দেখা যায়।
এ সময় পাশের পুলিশ ভ্যান থেকে কর্মকর্তারা হ্যান্ড মাইকে ওই শ্রমিকদের বাসায় চলে যাওয়ার অনুরোধ করছিলেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণে এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে এভাবে এখানে বসে থাকা যাবে না বলে সতর্কও করছিলেন তারা।
“তোমরা এখন চলে যাও। গার্মেন্ট বন্ধ। এই কারখানার মালিকের সাথে আলাপ করে তোমাদের জানানো হবে। এখন তোমরা বাসায় ফিরে যাও।”
মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার কাছে শাফিন গার্মেন্টের সামনে ২০-৩০ জন নারী শ্রমিক দেড় ঘণ্টা বসে থেকে পুলিশ সদস্যদের অনুরোধে চলে যান। কাছাকাছি আরেকটি গার্মেন্ট ‘বারগো’, সেখানে সকাল ১১টায় জড়ো হয়েছিলেন ৫০ জনের মতো নারী শ্রমিক। কারখানা বন্ধ থাকায় এক ঘণ্টা থেকে পুলিশের অনুরোধে চলে যান তারাও।
রামপুরার এই সড়কের পথে পথে পুলিশের পিকআপ ভ্যান দাঁড়ানো দেখা যায়। যেখানে মানুষের জটলা সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ বাসায় চলে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছিলেন তারা।
“এখন আমরা কী করমু কন? আমরা গরিব মানুষ খাইতে পারি না, আমাগোরে রিলিফ দেয় না। কী খামু কন?”
কত মাসের বেতন পান না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি দুই বছর ধইরা এই গার্মেন্টে কাজ করি। প্রতি মাসে সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতন পাইতাম। দুই মাসের বেতন বাকি। আইজকে মাসের ১৬ তারিখ, এখনো বেতন দেয় না মালিক। কী করতাম? কেমনে চলমু কন?”
লায়লার মতো শিউলীর মুখেও ছিল বিষাদের ছায়া।
রামপুরায় চার-পাঁচজন একসঙ্গে একটি টিন শেড ঘরে থাকেন শিউলীরা। তারা সবাই মালিবাগের চৌধুরীপাড়ার পোশাক কারখানায় কাজ করেন।
“তাইলে আমরা কী খামু, কেমনে বাসা ভাড়া দিমু? কিচ্ছুই ভালা লাগে না।”
শিউলীর বান্ধবী আলেয়া তাদের ত্রাণ না দেওয়ার অভিযোগ করেন।
ওমর আলী লেনের বাসিন্দা পোশাক কর্মী আমেনা এক মেয়ে ও স্বামী নিয়ে থাকেন ছোট্ট একটা ঘরে।
“আমি গার্মেন্টে কাম করি, এখন বন্ধ। গার্মেন্টে বেতনের আশায় তিন দিন গেছি। কইছে ২৬ তারিখের পর জানাইব। তাহলে আমরা কী খামু কন?”
নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি ছুটির পাশাপাশি লকডাউনের মধ্যে মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। অধিকাংশ পোশাক কারখানাও বন্ধ রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজকর্ম ধীরগতির হওয়ায় ১৬ এপ্রিলের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কারখানা মালিকরা।
তারপরেও প্রতিশ্রুত সময়সীমা পার হওয়ার একদিন আগ পর্যন্ত বিজিএমইএর তালিকাভুক্ত অর্ধেক কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয়নি।
বেতন না পেয়ে বুধবারও আশুলিয়া, উত্তরা, বাড্ডা, ভাটারা,মিরপুর, ভাষানটেক, শাহআলি, তেজগাঁও, মতিঝিল এলাকায় শত শত শ্রমিক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন।