বাংলাদেশে ১৭ জন আক্রান্তের মধ্যে একজনের মৃত্যুর পরদিন বৃহস্পতিবার এই পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভিডিও কনফারেন্সে এই সিদ্ধান্ত আসে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবদের নিয়ে দেশের সব বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই ভিডিও কনফারেন্স করেন।
প্রায় দুই ঘণ্টার আলোচনায় মুখ্য সচিব কায়কাউস বলেন, “রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সব ধরনের সমাবেশ বন্ধ থাকবে।”
তবে মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ করার কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই বলে জানান তিনি।
“কোয়ারেন্টিনে যারা আছেন, তাদের পরিবারের কোনো সদস্য নামাজে যাবেন না। যার জ্বর, সর্দি, কাশি আছে, তারা যাবে না।”
মন্ত্রিপষিদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, “আমরা বলে দিয়েছি, সর্দি, কাশি, জ্বর যার থাকবে, কোনো অবস্থাতেই মসজিদে যাবেন না। আমি অলরেডি কয়েকজন মুফতির সঙ্গে কথা বলেছি।”
করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাজারে কেনাকাটার হিড়িকের বিষয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, “অনেকেই বলেছেন বাজারের ভেতর অপ্রয়োজনীয় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এখানে খাদ্য সংকট বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট হওয়ার কোনো সুযোগ নাই।”
‘মুনাফাখোরদের’ দৌরাত্ম্য রোধে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসনকে নিবিড়ভাবে কাজ করতে বলার পাশাপাশি কোনো ধরনের গাফিলতি সহ্য করা হবে না বলেও হুঁশিয়ার করা হয়।
তিন মাসে যারা দেশের বাইরে থেকে এসেছে, তাদের তালিকা বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মুখ্য সচিব বলেন, “গত ১৫ দিনে যারা এসেছে, তাদেরকে কিন্তু আমাদের চিহ্নিত করে হোম কোয়ারেন্টিন করতে হবে।”
হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের উপর নজরদারি বাড়ানো ও আইন অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
সভা শেষে কায়কাউস সাংবাদিকদের বলেন, “যারা সন্দেহভাজন ছিল তাদেরকে আমরা নিবিড় পরিবীক্ষণে রাখতে পারছি। অর্থাৎ এই পর্যায়ে প্যানিকড হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ কখনোই উদাসীন ছিল না।”
ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যের ফ্লাইটগুলো চলবে কি না, জানতে চান বিমান সচিব মহিবুল হক।
কায়কাউস বলেন, “টার্কি ও যুক্তরাজ্যের ফ্লাইট আপাতত বন্ধ হচ্ছে না। তবে সেখান থেকে যারা আসবে, তাদের মধ্যে যাকে সন্দেহভাজন মনে হবে, তাকে কোয়রেন্টিনে নিয়ে যাওয়া হবে আশকোনাতে। আর অন্যদের হোম কোয়ারিন্টিনে যেতে হবে।”
‘কোয়ারেন্টিন না মানলে জেল’
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে বিদেশ ফেরত এবং তাদের সংষ্পর্শে আসা সবার কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এই নিদের্শনা না মানলে ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি নিদের্শনায় এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, “করোনাভাইরাস প্র্রতিরোধের লক্ষ্যে সম্প্রতি বিদেশ ফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে আসা সকলকে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য নিদের্শনা প্রদান করা হচ্ছে।
“এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে আপনার অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করুন। নিদের্শনা লঙ্ঘন করলে সংক্রামক রোগ (প্র্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮) ২৪ (২) ধারা অনুযায়ী শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।”
এছাড়া জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়।