প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা ও দুশ্চিন্তা থাকলেও ভোট পেছানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
Published : 16 Mar 2020, 10:58 PM
সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা সভায় একথা জানান তিনি।
সিইসি বলেন, “করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা অত্যন্ত শঙ্কিত আছি। আমাদের আশঙ্কা আছে, দুশ্চিচিন্তগ্রস্ত আছি। যেহেতু নির্বাচনে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি আছে, সুতরাং এই নির্বাচন আমরা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। আল্লাহর রহমতে ঠিক হয়ে যাবে হয়ত।”
আগামী ২১ মার্চ ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ সংসদীয় আসনের উপ নির্বাচন হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হবে ২৯ মার্চ।
নূরুল হুদা বলেন, ““ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনটা পেছাতে চাচ্ছি না। এর মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে।
“তবে যারা নির্বাচনে কাজ করবেন তাদেরকে সতর্ক অবস্থায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা যদি মেনে না চলা হয়, তা হলে নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।”
বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কার মধ্যে মুজিববর্ষের নানা অনুষ্ঠান কাটছাট, ৩১ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা, বিভিন্ন পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসছে।
এরইমধ্যে ভোটের প্রচারে সতর্কমূলকতা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলে আসছে আইইডিসিআর।
চট্টগ্রামের ভোটও চলবে
ঢাকা উপ নির্বাচন চার দিন বাকি থাকলেও চট্টগ্রাম সিটি ভোট হতে এখনও ১৩ দিন বাকি।
সিইসি বলেন, “চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন বন্ধ করিনি এখনও। যতক্ষণ বন্ধ করিনি, ততক্ষণ হবে।”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ পাঁচ আসনের উপ-নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার কাজে জনসভা, পথসভা পরিহার করার জন্য বলেন সিইসি। এক্ষেত্রে বিকল্প প্রচার মাধ্যম বেছে নেওয়া অনুরোধ জানান তিনি।
আইইডিসিআর সব ধরণের জনসমাগম না করার নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, “এখনই বিষয়টি টেক আপ করবো। মেসেজটা যেন পৌছে দিতে পারে, সেজন্য ব্যবস্থা নেবো, আমাদের যত নির্বাচন আছে। প্রার্থীরা যেন সীমিত আকারে অন্য ডিভাইসে প্রচার করে। যেন জনসভা, পথসভা পরিহার করে সে অনুরোধ করবো।”
দুর্যোগ মোকাবেলার বাংলাদেশের সফলতার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
“পৃথিবীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা একটা মডেল। যে কোনো ক্রাইসিসে সময় লোকজন স্বতস্ফুর্তভাবে এগিয়ে আসেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই এই স্বতস্ফূততা নেই। এই শক্তি আমাদের আছে। এই শক্তিকে সামনে রেখেই বলবো যে, দুর্যোগ যাই আসুক মোকাবেলা করা যাবে। করোনাভাইরাসও মোকাবেলা করা যাবে। আমরা নির্বাচনটা পেছাতে চাচ্ছি না।”
মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনের নিয়ে মন্তব্য মাহবুব তালুকদারের
আইন শৃঙ্খলা সভায় লিখিত বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনের একাংশ নিয়ে নিজের মতামতও তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
গত ১২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্রাকটিসেস’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও মুক্ত বলে বিবেচিত হয়নি। ব্যালটবাক্স ভরা বিরোধী প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও রয়েছে।
এ বিষয়ে তালুকদার বলেন, “স্বভাবতই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর এ সকল অভিযোগ সম্পর্কে কমিশনের ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আত্মসমালোচনার প্রয়োজন ছিল।”
এ ক্ষেত্রে ‘ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্য রে লও সহজে’ রবীন্দ্রনাথের একটি বাণী তুলে ধরেন তিনি।
মাহবুব তালুকদার বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে বিদেশী সরকার বা আন্তর্জাতিক মহল বক্তব্য দেয়ার অধিকার রাখে কি না, এটি একটি বড় প্রশ্ন।”
‘ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’এ স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশও- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার ধারণা কোনো জাতীয় নির্বাচন, যার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়, তা কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে না।”