বিদেশফেরত এক রোগীর পরিবারের ৩ সদস্যও আক্রান্ত

বাংলাদেশে আরও তিনজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যারা এর আগে আক্রান্ত এক প্রবাসীর পরিবারের সদস্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2020, 07:02 AM
Updated : 16 March 2020, 02:31 PM

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সোমবার এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, নতুন যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে দুজন শিশুর বয়স দশ বছরের নিচে, অন্যজন নারী। দুই শিশুর জ্বর-সর্দি ছিল, তাদের সবার সংক্রমণই ‘মৃদু’। 

এর আগে দ্বিতীয় দফায় ইতালি ও জার্মানি ফেরত যে দুজনের মধ্যে ভাইরাস ধরা পড়েছিল, তাদেরই একজনের মাধ্যমে তার পরিবারের ওই তিন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন।

ওই তিনজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, “তাদের লক্ষণ উপসর্গ মৃদু। তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে যেন আরও ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য তাদের আমরা আইসোলেশন ইউনিটে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। অন্যান্য দেশের মত তাদেরও বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা যেত, কিন্তু আমরা তা করছি না।”

এ নিয়ে বাংলাদেশে মোট আটজনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ল, যাদের মধ্যে প্রথম দফায় আক্রান্ত তিনজন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন; হাসপাতালে ভর্তি আছেন পাঁচজন।

আক্রান্তরা যে উপজেলার বাসিন্দা, সেখান থেকে যেন রোগটি ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সেখানে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইইডিসিআর পরিচালক।

তিনি বলেন, “এ মুহূর্তে যারা হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন, তাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে হলে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিতে হবে।

“যারা বিদেশ থেকে এসে পরিবারের সঙ্গে থাকছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদেরই সেপারেশনটা নিশ্চিত করতে হবে। কমপক্ষে ১ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে তাদের মেলামেশা করতে হবে।”

যদি কেউ হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার বিষয়টি না মেনে অবাধ ঘোরাফেরা করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে বলে সতর্ক করেন অধ্যাপক ফ্লোরা।

তিনি বলেন, “সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অপরিচিত মানুষের সমাবেশ হয়, এমন আয়োজন বন্ধ রাখুন।”

করোনাভাইরাস অতি দ্রুত ছড়ালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর সংক্রমণে খুব মৃদু উপসর্গ দেখা দেয় জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, “আমরা বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, তারা মৃদু রোগে ভুগছেন। তাদের মৃদু কাশি, গলাব্যথা, মৃদু জ্বর। আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি সতকর্তায়। সবার অংশগ্রহণ ছাড়া কিন্তু রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।”

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে তিনজন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানায় আইইডিসিআর।

ওই তিনজনের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে এসেছিলেন। ইতালি ফেরত একজনের পরিবারের সদস্য ছিলেন আক্রান্ত তৃতীয়জন। ওই সময় আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি আরও চারজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল।

এরপর গত শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরও দুজন আক্রান্তের খবর জানান। ওই দুজন ইউরোপের দেশ ইতালি ও জার্মানি থেকে এসেছিলেন। তাদেরই একজনের মাধ্যমে আরও তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন।

আইইডিসিআরে এ পর্যন্ত ২৪১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ওই আটজন ছাড়া আর কারও মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েনি বলে জানানো হয় ব্রিফিংয়ে। 

ডা. ফ্লোরা বলেন, “এই মুহূর্তে আইসোলেশনে রয়েছেন ১০ জন।  তারা বিভিন্নভাবে এসেছেন। যাদের নমুনা পরীক্ষায় রেজাল্ট নেগেটিভ  এসেছে তারা বাড়ি চলে গেছেন।”

সোমবার থেকে আইইডিসিআরে এলে আর কারও নমুনা সংগ্রহ করা হবে না জানিয়ে পরিচালক বলেন, “যদি কারও নমুনা পরীক্ষা করতে হয়, তাহলে আইইডিসিআরের হটলাইনে (০১৯৪৪৩৩৩২২২) কল করলেই হবে। আইইডিসিআরের টিম গিয়ে তার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আনবে।