দেশে ফিরলে তারা সবাই ‘নবাবজাদা’ হয়ে যান বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এই মন্তব্যের পেছনে সরকারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ওই সব প্রবাসীদের নাখোশ হওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন মন্ত্রী।
ব্যাপক মাত্রায় সংক্রামক করোনাভাইরাস বাইরে থেকে এসে দেশের ভেতরে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ বিদেশফেরতদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করেছে।
বিশ্বজুড়ে মহামারী আকারে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কেন্দ্র হয়ে ওঠা ইতালি থেকে শনিবার সকালে দেশে ফেরা ১৪২ জনকে নেওয়া হয় আশকোনা হজ ক্যাম্পে। সেখানে তাদের দুই সপ্তাহ বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের ঘোষণা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিলেও রাতে সবাইকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়।
রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ”যে সমস্ত দেশে করোনাভাইরাস অস্বাভাবিক মাত্রায় ছড়িয়েছে, সেই সমস্ত দেশ থেকে আসা বন্ধ না করলেও যিনি আসবেন তাকে কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে।
”কিন্তু আমাদের বাঙালি প্রবাসীরা যখন আসেন, তারা এটাতে খুব অসন্তুষ্ট হন। এবং তারা দেশে আসলে সবাই নবাবজাদা হয়ে যান। ফাইভ স্টার হোটেল না হলে অপছন্দ করেন। আমাদেরতো একটা দৈন্য আছে। এটাতো একটা বিশেষ অবস্থা।”
দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা মোমেন শ্লেষের সঙ্গে বলেন, “গতকালকে যারা দেশে এসেছেন, ন্যাচারালি তারা কোয়ারেন্টিনে যেতে চান না। দেশে আসছেন সুতরাং সাথে সাথে বাড়িতে যাবেন, এই আগ্রহ থেকে আসছেন। তারপরে আমরা যেখানে রাখব, আগেও ৩১২ জনকে ওখানে রেখেছিলাম।
”তারা এসে সেখানে পছন্দ করেন নাই। বাংলাদেশে ফ্ল্যাট বাথরুম হয়, তারা কমোড বাথরুম ইউজ করেন। সুতরাং তাদের অসুবিধা হয়েছে। আমরা পর্যটন করপোরেশন থেকে খাবার দিয়েছি, তারা মনে করেন, সোনারগাঁও… ফাইভ স্টার থেকে খাবার দেওয়া উচিত।
”আমরা সেটা দিতে পারিনি। সেজন্য তারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন রকম অভিযোগ ছিল। আর তারা মনে করেন এগুলো খুব নোংরা। আমরা পাঁচ ফুট দূরে দূরে বেড রেখেছি, তারা এগুলো পছন্দ করেন নাই। তারা চাইছিলেন ভালো বেড-টেড।”
যে সব দেশে করোনাভাইরাস বেশি, সে সব দেশ থেকে ফ্লাইট বন্ধ করার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যাতে বহিরাগত এসে ভাইরাস না ছড়ায়। আামদের মানুষদের রক্ষা করার জন্য।
”আমাদের ষোল কোটি লোক কয়েকটি ছেলে-পেলের জন্য আক্রান্ত হোক, আমরা এটা চাই না। কারণ আমাদের বিভিন্ন ধরনের দুর্বলতা আছে। সমাজের দুর্বলতা আছে। সেজন্য আমরা ঠিক করেছি যে, ওদেরকে দূরে রাখার জন্য।”
”কিন্তু তারা এটা শোনেন নাই। সেজন্য আমরা বাধ্য হয়ে আপনার বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন বন্ধ করে দিয়েছি।”
এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রয়োজন দেখছেন না জানিয়ে শিক্ষকতা থেকে রাজনীতি আসা মোমেন বলেন, “স্কুল-কলেজ বন্ধ তো হিড়িকের মধ্যে। হিড়িকের মধ্যে বন্ধ করলে তো আতঙ্ক সৃষ্টি হবে। আপনি যদি দেখেন, করোনাভাইরাসে যাদের মৃত্যু হয়েছে ১ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় জিরো। এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও প্রায় জিরো।
”একটিও ছাত্র-ছাত্রীর হয়নি। আমাদের এটাতো ইমপোর্টেড। সুতরাং আমাদের বাকি ছেলে-মেয়েরা তো অসুস্থ না। অসুস্থ হলে দেখা যেত। আর ইতালিতে যারা মারা গেছে, তথ্য হলো ৮০ ভাগের বেশির বয়স ৮০ বছরের উপরে।”
তিনি বলেন, “স্কুলে বরং থাকলে কীভাবে হাত ধুতে হয়, পরিষ্কার কীভাবে থাকতে হয়, করোনাভাইরাসের যে বিভিন্ন রীতি-নীতি শিখবে। বাড়িতে গেলে ঘুমাবে। সেজন্য আমরা খোলা রেখেছি।
“যখন প্রয়োজন হবে, সরকার এ ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল, অত্যন্ত যত্নশীল, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে স্কুল বন্ধ হবে। আমেরিকা, কানাডা ও ব্রিটেন তো স্কুল বন্ধ করেনি। আমাদের প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ বন্ধ করেছে। হয়ত অন্য কারণে বন্ধ করেছে। আমাদের এখানে যখন বন্ধ করার দরকার হবে, তখন অবশ্যই বন্ধ করব।“
রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।