জেলায় জেলায় বিদেশ ফেরতরা বাড়িতেই পর্যবেক্ষণে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় বিদেশফেরত প্রবাসীদের জেলায় জেলায় তাদের বাড়িতেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2020, 07:49 PM
Updated : 14 March 2020, 07:59 PM

শনিবার বাংলাদেশে আরও দুজনের নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানালেও কয়েকটি জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন সেসব আক্রান্তের খবর স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের দেয়নি।

তবে স্বগৃহে পর্যবেক্ষণে রাখা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। তবে শনিবার বিকালে ইতালি থেকে দেশে আসা ৪৪ জনকে গাজীপুরে এক কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

শরীয়তপুর

বিদেশ থেকে ফেরত আসা ২২৬ জনকে (হোম কোয়ারেন্টিনে) বাড়িতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শরীয়তপুর স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে তাদের প্রত্যেককে ১৪ দিন বাড়িতে একাকি বাস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রতিটি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে আইসোলেশন রুম প্রস্তুতসহ ‘র‌্যাপিড রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে।

শরীয়তপুর সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. আবদুর রশিদ জানান, করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করার লক্ষ্যে বিদেশ থেকে আগত প্রবাসীদের ২২৬ জনকে তাদের বাড়িতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

এসব প্রবাসীর মধ্যে কাতার, কুয়েত, জর্দান, ওমান, মালদ্বীপ, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাহরাইন, ফ্রান্স,ইতালি, সৌদি আরব, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, দুবাই, গ্রিস, মরিশাস ও সিঙ্গাপুর ফেরত যাত্রীরা রয়েছেন বলে জানান তিনি।

৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসাপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রুম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. এসএম আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকর্মীকে খোঁজ রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে।

গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জে শনিবার থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১১ জন। এরমধ্যে টুঙ্গিপাড়া, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া উপজেলায় তিনজন করে, মুকসুদপুরে দুই জন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।  

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ জানিয়েছেন, এরা সবাই ইতালি, চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত ও সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছেন।

তারা এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি বলে জানান তিনি।

চাঁদপুর

চাঁদপুরে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পর শঙ্কামুক্ত হয়ে শনিবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ৫৬১ জন প্রবাসী। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন আরো ৪৪৬ জন প্রবাসী।

শনিবার বিকালে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম জাকারিয়া জানান, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা কোন ব্যক্তির শরীরেই করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি।

তবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিদেশফেরত প্রবাসীদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত চাঁদপুরে মোট ১ হাজার ৭ জন প্রবাসী তাদের বাড়িতে ফিরেছেন। এদের মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলায় ৯৮ জন, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ২০৮জন, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ১৫২জন, শাহরাস্তি উপজেলায় ৯৪ জন, হাইমচর উপজেলায় ১৪ জন, মতলব উত্তর উপজেলায় ৮৭ জন এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ১০৬ জন অবস্থান করছেন।

জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিস চাঁদপুরে ফিরে আসা প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

বিদেশ থেকে আগতদের বেশির ভাগই এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন থেকে। যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, লিবিয়া, স্পেন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকেও এসেছেন অনেকে।

সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্যাহ জানান, শুরুর দিকে বিদেশ ফেরত দুই-একজন কোয়ারান্টিনে থাকার ব্যাপারে অনাগ্রহী থাকলেও বর্তমানে সবাই কোয়ারান্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

“কারো সর্দি-জ্বর বা এ ধরনের কোন উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে যেন আমাদের সাথে যোগাযোগ করে সেই পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি বলেন, যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা হোম কোয়ারেন্টিনের পাশাপাশি ১০০ শয্যার আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রেখেছি।

এরমধ্যে জেলার ৭ উপজেলায় ৫০, আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৩০টি এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরো ২০টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান বলেন, হোম কোয়ারেন্টিন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য পুলিশ পুলিশ বিভাগ থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্য কর্মীসহ গ্রাম পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন।

বগুড়া

বগুড়ায় নতুন করে বিদেশ ফেরত আরও ১১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত জেলায় মোট ২০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হলো।

বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সামির হোসেন মিশু বলেন, “গত ১১ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত জেলায় মোট ২০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

বগুড়া সদর ও সোনাতলা উপজেলায় পাঁচজন করে ১০ জন এবং ধুনট ও সারিয়াকান্দিতে একজন করে দুইজনকে হোমকোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সবচেয়ে বেশি ৮জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে নন্দীগ্রাম উপজেলায়।

নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন মন্ডল জানান, শনিবার ওই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নতুন করে ছয়জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে। এরআগে গত ১২ মার্চ সৌদি আরব থেকে ওমরা হজ করে আসা এক দম্পতিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।

ভোলা

ভোলা জেলায় ইতালি ফেরত এক প্রবাসী যুবককে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

ভোলার সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী জানান, ভোলা ২৫০ শয্যা জেনার‌্যাল হাসপাতালে ২০ শয্যার একটি আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।

এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩/৫ শয্যার পৃথক অইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে।

জেলা ও উপজেলায় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও বিশেষ টিম কাজ করছে।

জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় গ্যাস ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট এ কর্মরত চীনা নাগরিকদের উপর বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। তাছাড়া বিদেশ ফেরত ও বিশেষ করে চীন ও ইতালি থেকে আসা বাংলাদেশিদের উপর নজরদারি রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে যেসব রোগী জ্বর-সর্দী-গলাব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে আসে তাদেরকে আলাদাভাবে স্ক্যানিং করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দিনাজপুর

বিদেশ ফেরত কতজন প্রবাসী দিনাজপুর জেলায় এসেছেন তার কোন পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।

দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন- দিনাজপুরে চীন ফেরত এক শিক্ষার্থীসহ তার পরিবারের তিনজন এখনো হোম আইসোলেশনে রয়েছে।

আইইডিসিআর গত ১১ মার্চ ওই শিক্ষার্থীর নমুনা সংগ্রহ করলেও ১৪ মার্চ পর্যন্ত এর রিপোর্ট আসেনি। তবে তারা এখন সুস্থ্য আছে বলে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন।

তবে দিনাজপুরে নতুন করে আর কাউকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহে বিভিন্ন উপজেলায় বিদেশ ফেরত আট প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

এরমধ্যে রয়েছে গফরগাঁওয়ের দক্ষিণ কোরিয়া ফেরত দুইজন, ফুলবাড়িয়া সৌদি ফেরত দুইজন ও ময়মনসিংহ সদরে ইতালি ফেরত চারজন প্রবাসী রয়েছেন বলে শনিবার ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মশিউর আলম জানান।

তিনি বলেন, ওই আটজনই পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তারপরেও বাড়তি সতর্কতার জন্য তাদের স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

নেত্রকোণা

নেত্রকোণায় ইতালি ও চীন ফেরত চারজনকে হোম কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে তাদেরকে তাদের বাড়িতেই আলাদা কক্ষে থাকার পরামর্শ দেয় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

হোমকোয়ারেন্টিনে থাকাদের মধ্যে কলমাকান্দায় চীন ফেরত একজন, দুর্গাপুরে ইতালি ফেরত একজন, সদর উপজেলায় ইতালি ফেরত দুইজনসহ মোট চারজন রয়েছেন।

এসব তথ্য জানিয়ে নেত্রকোণা জেলা সিভিল সার্জন ডা. তাজুল ইসলাম  বলেছেন, শুক্রবার থেকে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের খোঁজ খবর রাখছেন।

“শনিবার নতুন করে বিদেশ ফেরত আর কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি।”