নতুন দুজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত

বাংলাদেশে আরও দুজনের নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2020, 04:27 PM
Updated : 14 March 2020, 08:48 PM

শনিবার রাতে মিন্টো রোডে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ছিল। তিনজন এখন ভালো আছে, দুইজনকে আমরা ছেড়েও দিয়েছি। আরেকজনকে আমরা ছেড়ে দেব।

“ইতোমধ্যে আরও দুইজন রোগী পেয়েছি। এখন আমরা সেই দুইজনকে নিয়ে এসেছি এবং হাসপাতালে রেখেছি। যা যা চিকিৎসা দেওয়া দরকার সেটা শুরু করেছি।”

এই দুজন ইতালি ও জার্মানিফেরত প্রবাসী বাংলাদেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।

কীভাবে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আজকেই তাদেরকে আমরা পেয়েছি এবং শনাক্ত হওয়ার পরই তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে গেছি।

 “এদের একজন ইতালি থেকে এবং আরেকজন জার্মানি থেকে এসেছিলেন। এরা বাংলাদেশেরই নাগরিক। আসার পরই এরা হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। অসুস্থ হওয়ার পরে তাদেরকে এখানে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়।”

এর আগে গত ৮ মার্চ তিনজনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

করোনাভাইরাস আক্রান্তদের ঢাকার একটি হাসপাতালে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে

ওই তিনজনের দুইজন ছিলেন ইতালি প্রবাসী, অপরজন ছিলেন তাদের একজনের স্ত্রী। ইতালিতে করোনাভাইরাস ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়েছে। চীনে এই রোগ প্রথম দেখা দিলেও ইউরোপের এই দেশটি থেকেই তা বিশ্বজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।  

ওই ইতালি থেকে শনিবার আসা ১৪২ জনকে বাধ্যতামূলকভাবে আশকোনার হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে পরে রাতে তাদের নিজেদের ঘরে ফিরে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রথম যে তিনজনের করোনাভাইরাস ধরা পড়েছিল তাদের মধ্যে দুজন এখন এই ‘ভাইরাসমুক্ত’ বলে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি বলেন, “যে তিনজন ব্যক্তির কভিড -১৯ আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল, তাদের মধ্যে দুজন করোনামুক্ত।

“তৃতীয় ব্যক্তির একটি পরীক্ষা করা হয়েছে, তাতে রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে। আরও ২৪ ঘণ্টা পরে আরেকটি পরীক্ষা করা হবে। তাতে যদি নেগেটিভ আসে রেজাল্ট, তাহলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।”

দুপুর পর্যন্ত করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে নয়জন আইসোলেশনে এবং চারজন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন মীরজাদী ফ্লোরা।

কভিড-১৯ রোগের মতো কোনো লক্ষণ যদি কারও থেকে থাকে, তাকে হাসপাতালে আলাদা রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়, যাকে বলে আইসোলেশন।

আর কভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন কোনো না কোনোভাবে, কোনো লক্ষণ শুরুতে দেখা না গেলে তাদের আলাদা রাখার ব্যবস্থাটি হচ্ছে কোয়ারেন্টিন।

বিদেশফেরতদের মাধ্যমে এই ভাইরাসের বিস্তার যাতে আর না ঘটে সেজন্য বিমানবন্দরে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “ওখানে নতুন স্ক্যানার লাগানো হয়েছে। জেলায়, উপজেলায় এবং বিভাগীয় শহরেও কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা রেখেছি। বিশ্বের সব জায়গায় এখন করোনাভাইরাসের জন্য সেলফ কোয়ারেন্টিনের চর্চা চলছে। আমরা জানি, পুরো ইতালি এখন সেলফ কোয়ারেন্টিনে গিয়েছে। সেই বিষয়টি আমরাও করছি এবং আমরা জোরদারভাবে মনিটর করছি। আমাদের ডিসি, এসপি, সিভিল সার্জনরা মনিটর করছেন।”

শনিবার ইতালি থেকে যারা ফিরেছেন তাদের ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ পাঠানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “আজকেও কিছু প্যাসেঞ্জার এসেছে, তার মধ্যে জার্মানি ও ইতালি থেকে এসেছে। প্রায় দেড়শজন এসেছে, তাদেরকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে রেখেছি। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এবং তারা সবাই সুস্থ আছেন।

“তারা ইতালি থেকেই সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছে যে, তারা সুস্থ আছেন। তাদের কাছ থেকে আমরা লিখিত নিয়ে বিভিন্ন পরিবহনে পুলিশ স্কটে যার যার এলাকায় পৌঁছে দেব। তারা যেন কোয়ারেন্টিনে থাকে সেই ব্যবস্থা করব।”

ইতালিসহ করোনাভাইরাস আক্রান্ত ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে রোববার আরও দেড়শজন আসছেন বলে জানান মন্ত্রী।

“তাদেরও একইভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে,” বলেন তিনি।

শনিবারের ইতালিফেরতরা ইউরোপের ওই দেশটির নিয়ম-কানুন না মেনেই দেশে চলে এসেছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভেনিস থেকে এমিরেটসের শেষ ফ্লাইট এসেছিল। সেখানে বাংলাদেশি বা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ইতালিয়ান নাগরিকরা সেই ফ্লাইটে স্থানীয় নিয়মকানুন তোয়াক্কা না করে বা নিয়মভঙ্গ করে এই যাত্রাটি করেছেন। ইতালিয়ান রেকর্ড ঘেঁটে আমরা জেনেছি, একেবারে এসেনিশয়াল ট্রাভেল ছাড়া যাওয়া যাবে না।

“এগুলোকে বাইপাস করে এই নাগরিকরা দেশে এসেছেন। এবং এরা ফেরত গেলে তিন মাসের কারাদণ্ড এবং ২০০ বা ৩০০ ইউরো জরিমানার বিধান রয়েছে।”