গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স থেকে চাকরিচ্যুতদের করা পাঁচ মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।
Published : 03 Nov 2019, 12:48 PM
ঢাকার দ্বিতীয় শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান জাকিয়া পারভীন রোববার তৃতীয় শ্রম আদালতের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এর মধ্যে তিনটি মামলায় ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। হাই কোর্ট তাকে ৭ নভেম্বরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিল। বাকি দুটি মামলায় ৫ নভেম্বর দিন ধার্য থাকলেও বিদেশ সফরের সূচি থাকায় আগাম জামিনের আবেদন করেন ড. ইউনূস।
শুনানি শেষে বিচারক জাকিয়া পারভীন প্রত্যেক মামলায় ১০ হাজার টাকা করে মোট ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় এ জামিন মঞ্জুর করেন বলে আদালতের রেজিস্ট্রার ওয়াসিউর রহমান জানান।
ইউনূসের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের মোট সাতজন চাকরিজীবী মামলা পাঁচটি করেন, যাদের যাদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।
“যেখানে তারা বলেছেন যে তারা ট্রেড ইউনিয়নের সাথে যুক্ত, তাই তাদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়নি। পাঁচটি মামলার তিনটিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছিল। দুটিতে সমন জারি করা হয়েছিল।
“যে তিনটি মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল, সে তিনটি মামলায় তিনি যেন নির্বিঘ্নে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন, সে বিষয়ে হাইকোর্টের আগে একটি নির্দেশ ছিল। আজকে আদালতের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়ে তিনি আদালতে সমর্পণপূর্বক জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত উনার নিবেদনে সন্তুষ্ট হয়ে উনাকে জামিন দেন। উনার ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে চার্জ ফ্রেমিংয়ের তারিখ পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হয়।”
আগামীতে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আরেকটি আবেদন করেছিলেন ইউনূস। বিচারক তার আবেদন মঞ্জুর করে বলেছেন, অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ইউনূসকে অবশ্যই হাজির থাকতে হবে।
গ্রামীণ ট্রাস্টভুক্ত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স থেকে চাকরিচ্যুত করায় শ্রম আদালতে এই পাঁচ মামলা দায়ের করা হয়। পাঁচ বাদী হলেন- গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের জুনিয়র এমআইএস অফিসার (কম্পিউটার অপারেটর) আব্দুস সালাম, শাহ আলম, এমরানুল হক, হোসাইন আহমদ ও আব্দুল গফুর।
তাদের মধ্যে শাহ আলম প্রস্তাবিত গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, আব্দুস সালাম প্রচার সম্পাদক এবং এমরানুল সদস্য পদে ছিলেন। ইউনিয়ন গঠন করার কারণে তাদের ‘বেআইনিভাবে’ চাকরিচ্যুত করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান ইউনূসের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনীন সুলতানা ও উপ-মহাব্যবস্থাপক খন্দকার আবু আবেদীনকেও এসব মামলায় আসামি করা হয়।
এর মধ্যে তিন মামলায় তৃতীয় শ্রম আদালত গত ৮ অক্টোবর তিন আসামিকে হাজিরের নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করে। সে অনুযায়ী নাজনীন সুলতানা ও আবু আবেদীন ৯ আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করলে তাদের জামিন দেন বিচারক।
আর ইউনূসের ভাই মুহাম্মদ ইব্রাহীম হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। সেখানে বলা হয়, ইউনূস বিদেশে আছেন, দেশে ফিরে আদালতে যাবেন।
বিমানবন্দরে তাকে যেন হয়রানি করা না হয়, সে বিষয়ে হাই কোর্টের নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই আবেদনে।
শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের বেঞ্চ গত ২৮ অক্টোবর ইউনূসকে ৭ নভেম্বরের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলে। সেই সঙ্গে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তাকে হয়রানি না করতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের সব কর্মী নিয়োগ হয় চুক্তির ভিত্তিতে। যারা মামলা করেছিলেন, তারাও একই শর্তে চাকরি নিয়েছিলেন। এ কারণে তারা ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের আবেদন করলে রেজিস্ট্রার তা বাতিল করে দেয়, কেননা চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ‘অধিকার রাখে না’।
“ফলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অপরাধে তাদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার প্রশ্ন ওঠে না। এই কর্মচারীদের কয়েকজনের ক্ষেত্রে তাদের চাকরির শর্ত মোতাবেকই তাদের চাকরির ধারাবাহিকতার অবসান ঘটানো হয়; অন্যদের ক্ষেত্রে তাদের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা আর নবায়ন করা হয়নি। তবে কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়নি।”