রাজধানীর ধানমণ্ডির এক বাসায় গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর শাশুড়ি ও তার গৃহকর্মীকে গলাকেটে হত্যায় যে নারীকে সন্দেহ করা হচ্ছে, তিনি প্রকৃতপক্ষে গৃহকর্মী কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
Published : 03 Nov 2019, 01:33 AM
পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক শনিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই নারীকে ধরতে পারলে এই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যাবে। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমের একবার ওই নারীর অবস্থান মিরপুর পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।”
তাকে ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও কাজ করছে বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই নারী আদৌ কাজের বুয়া ছিল কি? ওই নারী কাজের লোকের বেশ ধরে এসে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
“একজন পেশাদার খুনি ছাড়া দুজনকে এভাবে জবাই করে হত্যা করা সম্ভব নয়। ওই নারী একজন পেশাদার খুনি। তাকে দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটনো হল সেটাই বের করার বিষয়।”
ওই বাসা থেকে একটু দূরে ওই নারীর পায়ের জুতা পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জুতা রক্তমাখা ছিল। এতে বোঝা যায়, ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে জুতা রেখে গেছে।”
শুক্রবার রাতে ধানমণ্ডির ২৮ নম্বর (নতুন ১৫) রোডের এক ভবনের পঞ্চম তলা থেকে গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান টিমটেক্স গ্রুপের এমডি ও ক্রিয়েটিভ গ্রুপের ডিএমডি কাজী মনির উদ্দিন তারিমের শাশুড়ি আফরোজা বেগম (৬৫) এবং তার গৃহকর্মী বিথীর (১৮) লাশ উদ্ধার করা হয়।
পাঁচতলার ওই ফ্ল্যাটে আফরোজা বেগম ও গৃহকর্মী বিথী থাকতেন, আর তার উল্টো দিকের ফ্ল্যাট এবং তার ঠিক উপরে ছয়তলার ফ্ল্যাট নিয়ে ডুপ্লেক্সে বাসায় স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন আফরোজার মেয়ে দিলরুবা সুলতানা রুবা।
রুবার স্বামী মনির উদ্দিন তারিম বলেছিলেন, শুক্রবার ওই বাসায় নতুন এক গৃহকর্মী কাজে এসেছিল।নিরাপত্তাকর্মী বা কর্মচারীদের যোগসাজশে ওই ‘কাজের বুয়াই’ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ঘটনার পর ভবনের নিরাপত্তাকর্মী নুরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, তারিমদের পরিবারের কর্মচারী বাচ্চু নতুন একজন গৃহকর্মীকে নিয়ে বিকাল ৩টার দিকে আফরোজা বেগমের বাসায় যায়।
“ঘণ্টাখানেক পর বাচ্চু একবার কোনো কাজে নিচে নামে। তখন তার পরনে ছিল লুঙ্গি। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাচ্চুকে বিল্ডিং থেকে বাইরে যেতে দেখা যায়। নতুন যে কাজের বুয়া এসেছিল, সেও সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে একা বেরিয়ে যায়।”
লাশ উদ্ধারের পর তারিম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এলাকার এক পানের দোকানদারের মাধ্যমে বাচ্চু নতুন ওই গৃহপরিচারিকার খোঁজ এনেছিল।
“এই কাজের বুয়াই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। বাসা তছনছ করে গেছে। টাকা, তিনটি ফোন, সঞ্চয়পত্র, সোনাসহ অনেক মূল্যবান জিনিস নিয়ে গেছে।”
“বাচ্চু তখন স্যুপ না নিয়েই দৌড়ে চলে আসে। এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এখানে দারোয়ানের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।”
পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহিল কাফি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আফরোজার তার মেয়ে, মেয়ের স্বামী ও নাতনির সঙ্গে সম্পর্ক ‘অত্যন্ত ভালো’ ছিল। শুক্রবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত তিনি তাদের ফ্ল্যাটে ছিলেন।
এ ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মচারীসহ ছয়জনকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে দুজন বাদে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে ধানমণ্ডি থানার ওসি আবদুল লতিফ জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে দিলরুবা সুলতানা রুবা বাদী শনিবার রাতে থানায় মামলা করতে এসেছিলেন, তবে গভীর রাত পর্যন্ত মামলা হয়নি বলে জানান ওসি।