“রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বাঁধা হয়ে দাড়ানোর কারণে এ হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”
Published : 29 May 2024, 09:08 AM
নরসিংদীতে ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল হাসানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরও দুজন আহত হয়েছেন। আটক হয়েছেন চারজন।
মাধবদী থানার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ভগিরথপুর এলাকায় মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান।
নিহত মাহবুবুল হাসান (৪০) ভগিরথপুর গ্রামের হাজী ইমাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি নরসিংদী সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
আহতরা হলেন- সাঈদ হাসান পাপ্পু (৩৮) ও ফরহাদ মিয়া (৪০)। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত মাহবুবুলের স্বজনরা বলছেন, মঙ্গলবার রাতে ভগিরথপুর মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ৮-১০ জন দলীয় নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। পথে ‘ওবায়দুল্লাহ টেক্সটাইলের’ সামনে ৭-৮ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মাহবুবুলসহ তার সঙ্গে লোকজনের ওপর হামলা করে।
এ সময় গুলি ও ধারাল অস্ত্রের আঘাতে মাহবুবুল, সাঈদ ও ফরহাদ আহত হন। স্থানীরা তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহবুবুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাহবুবুলের কর্মী প্রত্যক্ষদর্শী রবিন মিয়া বলেন, “দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হাসান নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে একটি বালুর ট্রাকের আড়াল থেকে ৭-৮ জন অস্ত্রধারী ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী’ হঠাৎ করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মাহবুবুলকে কোপাতে শুরু করে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা লোকজন বাঁচাতে গেলে তাদের ওপরও হামলা করে।
“রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বাঁধা হয়ে দাড়ানোর কারণে এ হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।” যোগ করেন রবিন।
নিহত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই হাফেজ মোহাম্মদ অলিউল্লাহ বলছেন, “আমার ভাই সাধারণ জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করত। মাদক ব্যবসা, অন্যায় অত্যচারের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদী ছিল। এসব কারণে খারাপ লোকজন কোণঠাসা থাকত।
“সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার ভাই যে পক্ষে কাজ করেছে তারা বিজয়ী হয়েছে। এ হিংসার জেরে পরাজিত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে।”
হামলার পর রাত পৌনে ১টার দিকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহবুবুলসহ তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় বলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মাহমুদুল কবীর বাশার জানান।
তিনি বলেন, “মাহবুবুল হাসানের মাথার পেছনে ঘাড়ে বড় ক্ষতের চিহ্ন দেখা গেছে। গুলির বিষয়ে ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। তার সঙ্গে থাকা সাঈদ হাসান পাপ্পু ও ফরহাদ মিয়া নামে আরও দুইজনকে আহত অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে বলে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ তদন্তের পাশাপাশি অপরাধীদের ধরতে তৎপরতা চালাচ্ছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহত মাহবুবুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলে নরসিংদী সদর থানায় ওসি তানভীর আহমেদ জানান।