সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও মুক্তিযুদ্ধকালীন রংপুর অঞ্চলের ত্রাস এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, এ রায় ইতিহাসের দায়মোচনে জাতির আরেক ধাপ অগ্রগতি।
Published : 31 Oct 2019, 01:47 PM
জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহার একাত্তরে ছিলেন ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি এবং আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার।
বৃহত্তর রংপুরে গণহত্যা চালিয়ে এক হাজার বেশি মানুষকে হত্যা, বহু নারীকে ধর্ষণ ও অপহরণ, নির্যাতনের দায়ে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রায় দেয়।
২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর আপিলে আসা এটি অষ্টম মামলা, যার ওপর চূড়ান্ত রায় হলো।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া মানে আমাদের দায়বদ্ধতা পূরণ হল। এর আগেও বেশকজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, তাদের রায় কার্যকর করা হয়েছে। এটিএম আজহারের বিরুদ্ধেও দেশের শীর্ষ আদালত যুদ্ধাপরাধের সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে।
“এই ঐতিহাসিক বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে জাতি আজ স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে। সেজন্য বিচার বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয়।”
একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “ইতিহাসের যে দায় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আছে, সে দায়পূরণের সুযোগ জীবদ্দশায় এসেছিল আমাদের সামনে। আমরা তরুণদের সাথে নিয়ে, গণজাগরণ মঞ্চের মধ্যে দিয়ে সামনে এনেছিলাম। সরকার ও বিচার বিভাগ সঠিক কাজটি করছে বলে আমার ধারণা। “
আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধ মামলায় এর আগের সাতটি রায়ের মধ্যে ছয়টিতে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, দলটির শুরা সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
আপিল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনেও তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
এভাবে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের সাজার রায় একে একে কার্যকর হলেও মফস্বলে বা দেশের বাইরে বহাল তবিয়তে থাকা ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ রয়ে যাওয়ায় শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে যারা এখনও বিচারের কাঠগড়ায় আসেনি বা দেশের বাইরে পলাতক রয়েছে, তাদের দ্রুত খুঁজে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বাংলাদেশ বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, “আমরা অনেক দিন ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে আসছিলাম। তিনি বড় অপরাধ করেছিলেন, সেই অনুযায়ী তারা সাজাও হয়েছিল। এখন আপিল বিভাগ সেই সাজা বহাল রেখেছে।
“এখন আমরা চাইব, এই সাজা দ্রুত কার্যকর করা হোক । আরও যারা এখনও বিচারের বাইরে আছে, তাদেরকে অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি করা হোক।