ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা তারেকুজ্জামান রাজিবকে ‘সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
Published : 19 Oct 2019, 11:11 PM
শনিবার রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি থেকে রাজিবকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুরে তার বাসা ও অফিসে র্যাবের অভিযান চলে।
রাতভর এই অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ উদ্ধারের পাশাপাশি রাজিবের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে বলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রাজীব গ্রেপ্তার হওয়ার পর রাতেই তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার কথা জানিয়েছে যুবলীগ।
গত মাসের মাঝামাঝি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর যুবলীগের অনেক নেতার মত গা ঢাকা দিয়েছিলেন রাজিব। এরপর তার খোঁজ শুরু হয় বলে র্যাবের মুখপাত্র সারোয়ার বিন কাশেম জানান।
সারোয়ার বিন কাশেম সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, রাজিবের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ রয়েছে তাদের হাতে। কিন্তু এই কাউন্সিলর আত্মগোপনে চলে যান এবং গত ১৩ অক্টোবর বসুন্ধরা আবাসিকের ওই বাসায় ওঠেন। ওই ফ্ল্যাটের মালিক রাজিবের এক বন্ধু, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।
ভবনের অষ্টম তলার ওই ফ্ল্যাট থেকে একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, সাত বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে রাজিবের পাসপোর্ট ও ৩৩ হাজার টাকা জব্দ করার কথা জানান র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
রাজিবকে ওই ফ্ল্যাট থেকে বের করে রাত সোয়া ২টার দিকে তাকে নিয়ে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটিতে যান র্যাব সদস্যরা। ওই আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের ৩৩ নম্বর ভবনে রাজিবের বাসায় প্রায় দেড় ঘণ্টা অভিযান চলে।
বাসা থেকে ভোর ৪টার দিকে রাজিবকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুরের চানমিয়া হাউজিংয়ে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে যান র্যাব সদস্যরা। সেখানে অভিযানের সময় সহযোগিতা না করা এবং আলামত নষ্ট করার অভিযোগে অফিস সহকারী সাদেক অহমেদকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
অভিযান শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসায় তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত যেসব ডকুমেন্ট ছিল, সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
সারোয়ার আলম বলেন, রাজিবের বিরুদ্ধে ভাটার থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটো মামলা হবে। তার বিরুদ্ধে অন্য যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলোও তদন্ত করে দেখা হবে।
“যে বাড়িতে তিনি থাকেন, ওই ডুপ্লেক্স ভবনটির দাম প্রায় ১০ কোটি টাকা। তার যে আয়, তার সঙ্গে এটা সঙ্গতিহীন। অর্থাৎ অবৈধ আয় দিয়ে তিনি এসব করেছেন “
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, জমি কেনাবেচা করে এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজিবের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েছেন তারা।
যে ব্যাংকে রাজিবের পাঁচ কোটি টাকা জমা দেওয়ার রশিদ পাওয়া গেছে, সেখানে খোঁজ নিয়েও প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
অন্যদিকে কাউন্সিলর অফিসে অভিযানের সময় রাজিবের বড় ভাই আখতারুজ্জামান রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, “ওর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। অল্প বয়স থোকে সে রাজনীতিতে জড়িত। এলাকার মানুষ জানে সে কত জনপ্রিয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এখন তাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।” “
শনিবার রাতে রাজিব গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করার কথা জানান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ।
রাজিব এর আগেও একবার সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে এক মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করায় মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার ফকিরাপুল-মতিঝিল এলাকার কয়েকটি ক্রীড়া ক্লাবে র্যাবের অভিযানের পর অবৈধভাবে ক্যাসিনোর কারবারে যুবলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এরপর যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতাকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়।
ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত ফকিরাপুল-মতিঝিল এলাকার কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ অভিযান শুরুর আগেই বিদেশে চলে যান। তাকেও দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।