কাউন্সিলর মিজানের বাসায় কোটি টাকার এফডিআর, অস্ত্র উদ্ধার

ঢাকার মোহাম্মদপুরে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে এক কোটি টাকার এফডিআর উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2019, 12:52 PM
Updated : 12 Oct 2019, 03:58 AM

পাশাপাশি তার স্বাক্ষর সম্বলিত বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বেশ কয়েকটি চেক উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলোতে লেখা টাকার অঙ্ক যোগ করে মোট ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার হিসাব পাওয়ার কথা র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানকে নিয়ে শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে লালমাটিয়ায় তার অফিসে এবং মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব রোডের বাসায় তল্লাশি শুরু করে র‌্যাব।

সন্ধ্যা ৬টার পর অভিযান শেষে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম ক্ষমতাসীন দলের এই নেতার হেফাজত থেকে উদ্ধার সামগ্রীর তথ্য জানান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাসা থেকে এফডিআর ও চেক উদ্ধারের আগে শ্রীমঙ্গলে গ্রেপ্তারের সময় মিজানের কাছে নগদ দুই লাখ টাকা এবং চার রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল পাওয়া যায়।

“তার চেক দিয়ে গতকাল ব্যাংক থেকে নগদ ৬৮ লাখ টাকা তুলেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি,” বলেন সারওয়ার আলম।

কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানে

তবে গ্রেপ্তারের সময় মিজানের কাছে দুই লাখ টাকা পাওয়া গেছে। বাকি ৬৬ লাখ টাকা তিনি কোথায় সরিয়েছেন, তার অনুসন্ধান চলছে বরে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তার পাসপোর্টটিও সঙ্গে পাওয়া যায়নি।

সারওয়ার বলেন, শ্রীমঙ্গলে প্রয়াত এক বন্ধুর স্ত্রীর বাসায় ছিলেন হাবিবুর রহমান মিজান। ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার তিনটি বাড়ি রয়েছে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসসহ আরও দুই-একটি দেশে তার বাড়ি রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তারা।

“টেক্সাসের ওই বাড়ি এবং মিজানের বিরুদ্ধে ফ্রিডম পার্টি সংশ্লিষ্টতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে কি না সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”

১৯৮৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টার মামলায় মিজান এবং তার ভাই আসামি।

সারওয়ার বলেন, মিজানের তিনটি বাড়ি থেকে ৯০ হাজার টাকা ভাড়া আসে। কাউন্সিলর হিসাবে মাসে ৩৬ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা পান। এর বাইরে তার কোনো আয়ের উৎস নেই।

“অথচ তার সম্পদ অনেক বলে জানা গেছে, আয়ের সঙ্গে যা সামঞ্জস্যহীন। তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকার চেক এবং এফডিআর পাওয়ায় তার আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন থাকে।”

মিজানকে এখন শ্রীমঙ্গলে নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গল থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মুদ্রপাচার আইনে দুটি মামলা হবে।

মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকের কারবার, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের চলমান ‘শুদ্ধি অভিযানের’ মধ্যে হঠাৎ করেই লাপাত্তা হন ক্ষমতাসীন দলের নেতা মিজান।

বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে র‌্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাবিবুর রহমান মিজান পাশের দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। গত রাতে শ্রীমঙ্গল থেকে তাকে আটক করা হয়।”

এর আগে সোমবার রাতে মিজানের খোঁজে আওরঙ্গজেব রোডের ওই বাসায় গিয়ে বিফল হয় র‌্যাব।

মোহাম্মদপুরের অনেকে এই ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে চেনেন ‘পাগলা মিজান’ হিসেবে। কথিত আছে, কয়েক দশক আগে একবার পুলিশের তাড়া খেয়ে পুকুরে নেমেছিলেন মিজান। পরে গ্রেপ্তার এড়াতে পরনের পোশাক খুলে রেখে তিনি পুকুর থেকে উঠে আসেন, সেই থেকে তার ওই নাম।

বিকালে র‌্যাবের তল্লাশির মধ্যে এক থেকে দেড় হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে মিজানের বাসার সামনে যান। ‘মাদক সম্রাট বিলুপ্ত ফ্রিডম পার্টির নেতা হাবিবুর রহমান মিজান, শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মিজানের ফাঁসি চাই’ লেখা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড দেখা যায় তাদের হাতে।