বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এর সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর ছাড় পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের ব্যর্থতা দেখছেন ফজলে নূর তাপস।
Published : 14 Oct 2019, 08:21 PM
এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে দুদকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইকবাল মাহমুদকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাপস সোমবার আদালত এলাকায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বলেন, “দুদক চেয়ারম্যান যদি বলে থাকেন বা বলতে চান বা মনে করেন, তিনি কোনো প্রভাবের কারণে এ ব্যবস্থা নেননি, তাহলে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। সে কারণে তার অবশ্যই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিৎ।
“আর যদি উনি মনে করেন যে, তিনি কোনো প্রভাব দ্বারা বা কারও কথায় প্রভাবিত হবেন না, তাহলে অবশ্যই জাতি মনে করে, আমরা মনে করি শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা করা হোক, তাকে গ্রেপ্তার করা হোক, জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।”
কয়েক বছর আগে বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে আলোচনায় ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান বাচ্চুর নাম।
জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চুকে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে চাপের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন।
বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংটির ঋণ বিতরণে অনিয়মের ঘটনাগুলো ঘটে, পরে দুদক ৫৬টি মামলা করে। বাচ্চুকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাকে কোনো মামলার আসামি করা হয়নি। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা তারা পায়নি।
কিন্তু তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য বাচ্চুকে দায়ী করেছিলেন। এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টও বাচ্চুকে আসামি না করায় উষ্মা প্রকাশ করেছিল।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব তাপস বলেন, “আমরা বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাতেও দেখেছি, বেসিক ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক খাতে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটার মূল ব্যক্তি হলেন তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু।
“কিন্তু আজ অবধি বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত যতগুলো দুর্নীতির মামলা হয়েছে, আমরা লক্ষ্য করেছি শুধু কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদেরকে সেসব মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে আজ অবধি কোনো মামলা হয়নি।”
“যদিও তার স্বেচ্ছাচারিতা ও একক সিদ্ধান্তে ঋণ জালিয়াতিগুলো ঘটেছে, তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন,” বলেন বেসরকারি মধুমতি ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক তাপস।
আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য বলেন, “জাতি মনে করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিবিরোধী যে অভিযান আরম্ভ করেছেন, শুদ্ধি অভিযান আরম্ভ করেছেন, সে প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে (বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি) দুদকের জবাবদিহিতা আবশ্যকীয়। কেন এখন পর্যন্ত আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
এদিকে ফজলে নূর তাপসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পদত্যাগ করা না করা সম্পূর্ণ দুদক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত বিষয়।
তিনি বলেন, “শেখ ফজলে নূর তাপস সাহেবের বক্তব্যটা আমরা অ্যাপ্রিশিয়েট করছি। উনি চাচ্ছেন বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলার চার্জশিট হোক। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে বা একজন নাগরিক হিসেবে বা একজন আইনজীবী হিসেবে উনি তা চাইতে পরেন।”
দুদক চেয়ারম্যানকে উদ্বৃত করে খুরশীদ জানান, বেসিক ব্যাংকের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি অনেক টাকা উদ্ধার হওয়ার পথে।
অভিযোগপত্রও শিগগির দেওয়ার কথা বললে সাংবাদিকরা দুদকের কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, তাতে আসামির তালিকায় বাচ্চুর নাম আসবে কি না?
জবাবে খুরশীদ বলেন, “উনার সম্পৃক্ততা থাকলে অবশ্যই থাকা উচিত। যদি ক্রেডিবল তথ্য প্রমাণ থাকে, তাহলে অবশ্যই আসবে।”