আগামী ৩০ মে তদন্তের সব নথি নিয়ে তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
বুধবার এসব মামলার কয়েকজন আসামির জামিন শুনানিতে নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ করতে না পারার বিষয়টি উঠে এলে হাই কোর্ট এই নির্দেশ দেয়।
পরে খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলায় জামিনের শুনানি করতে গিয়ে হাই কোর্ট সকল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তলব করেছেন।”
ওই ৫৬ মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনসহ সব মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের সমস্ত নথি নিয়ে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আদালত কেন এ নির্দেশ দিয়েছে জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী বলেন, “বেসিক ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা বিলম্বিত তদন্তের কারণে জামিন আবেদন করেন। সে জামিন শুনানি করতে গিয়ে প্রসঙ্গটি এসেছে। মামলা তদন্তের বিলম্বের কারণ এবং তদন্তের অগ্রগতি আদালত জানতে চাইছে।”
বিলম্বিত তদন্তের বিষয়ে আদালত কী বলেছে জানতে চাইলে খুরশীদ আলম খান বলেন, “এ প্রসঙ্গে আদালত বলেছেন, ‘আমরা একের পর এক পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনা দিচ্ছি। এর পরেও যখন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হচ্ছে না, আমালা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ডাকলাম, তারা সমস্ত নথিপত্র নিয়ে হাজির হবে’।”
দুদক আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার তদন্ত শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও বেসিক ব্যাংকের এসব মামলার তদন্ত প্রায় আড়াই বছর ধরে চলছে বলে জানান খুরশীদ আলম খান।
তিনি বলেন, “দুদক আইনে মামলা তদন্তে ১৮০ দিনের সময়সীমার বিষয়টি কিন্তু নির্দেশনা, বাধ্যবাধকতা নয়।”
এই আইনজীবী বলেন, বেসিক ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি ফজলুস সোবহান, সাবেক ডিজিএম শিপার আহমেদসহ কয়েকজনের জামিন আবেদন ছিল। তাদের একেক জনের নামে কয়েকটি করে মামলা আছে।
আসামিদের পক্ষে আব্দুল মতিন খসরু ছাড়াও বেশ কয়েকজন আইনজীবী ছিলেন বলে জানান খুরশীদ আলম খান।
ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দানসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধি বহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।
প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর গুলশান, পল্টন ও মতিঝিল থানায় ৫৬টি মামলা করে দুদক।
এসব মামলায় মোট দুই হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় ১৫৬ জন আসামির বিরুদ্ধে।
আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন; বাকিরা ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত।
এসব মামলার আসামির তালিকায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু বা ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কেউ না থাকায় দুদকের অনুসন্ধান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এ বিষয়ে দুদকের বক্তব্য ছিল, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা তারা পায়নি। তাই তার নাম আসামির তালিকায় রাখা হয়নি।
কিন্তু ২০১৬ সালে সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ করা নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে অনিয়মিত ঋণ মঞ্জুর, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতার কথা ছিল।
আর গতবছর অগাস্টে এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদকে আসামি না করায় উষ্মা প্রকাশ করে।
এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে বাচ্চুকে দুদকে ডেকে বেশ কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। ৩০ মে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের তারিখ রয়েছে।
বেসিক ব্যাংকের সাবেক ১০ পরিচালককেও দুদক ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু দুদক অভিযোগপত্র দাখিল না করায় কোনো মামলারই বিচার শুরু হয়নি।
আইনের আলোকে ব্যাখ্যা দেবে দুদক
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৬ মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা আইনের আলোকে উচ্চ আদালতে ব্যাখ্যা দেবেন বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব শামসুল আরেফিন।
হাই কোর্টের তলবের আদেশের পর তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একথা জানিয়েছেন।
দুদক সচিব বলেন, “সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, বেসিক ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত মামলার সকল তদন্ত কর্মকর্তাদের মহামান্য আদালত থেকে তলব করা হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তারা এই নির্দেশে অবশ্যই সেদিন আদালতের উপস্থিত হবেন এবং মামলার তদন্ত বিলম্বের যে বিষয়টি উঠে এসেছে, সেই বিষয়ে আইনের আলোকে ব্যাখ্যা প্রদান করবেন।”