ফ্ল্যাট থেকে ‘ঘুষ-দুর্নীতির’ ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের মামলায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিকের জামিন আবেদন নাকচ করেছে ঢাকার জজ আদালত।
Published : 15 Sep 2019, 05:35 PM
পার্থ গোপাল বণিকের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ রোববার এই আদেশ দেন।
সাময়িক বরখাস্ত এই কারা কর্মকর্তার জামিনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। দুদকের পক্ষে এর বিরোধিতা করেন মোশারফ হোসেন কাজল।
শুনানিতে কামরুল বলেন, পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে এ মামলাই হয়েছে ভুল আইনে। কারও বাড়িতে টাকা পেলে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয় না।
“কিসের ভিত্তিতে এ মামলা হল? এ টাকা কার? কাকে দেওয়ার জন্য অথবা কী করার জন্য এ কথিত টাকা তিনি বাড়িতে রেখেছিলেন? টাকার উৎস কী? মামলায় এসব বিষয় স্পষ্ট নয়। সুতরাং তিনি জামিন পেতে পারেন।”
এর বিরোধিতায় দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, “টাকা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টেই পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। টাকার যে কোনো রূপান্তর অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা তহবিলে জমা করা, কোনো জায়গায় সরিয়ে ফেলাও মানি লন্ডারিংয়ের সংজ্ঞায় পড়ে। সুতরাং মামলার এ পর্যায়ে তিনি জামিন পেতে পারেন না।”
শুনানি শেষে বিচারক পার্থ গোপাল বণিকের জামিন আবেদন নাকচ করে আদেশ দেন।
গত ২৯ জুলাই ধানমণ্ডির নর্থ রোডের (ভূতেরগলি) ২৭-২৮/১ নম্বর বাসার বি/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করার পাশাপাশি পার্থকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরদিন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
‘অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থের অবস্থান গোপন ও পাচারের উদ্দেশ্যে’ বাসায় লুকিয়ে রেখে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারায় অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয় পার্থের বিরুদ্ধে।
দুদকের কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধার হওয়া টাকার মধ্যে পার্থের ফ্ল্যাটের দেয়াল কেবিনেটে গেঞ্জিতে মোড়ানো ছিল ৫০ লাখ টাকা। একটি স্কুল ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩০ লাখ টাকা।
আটকের সময় ডিআইজি পার্থ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, এই ৮০ লাখ টাকা তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা তার শাশুড়ি দিয়েছেন, বাকি ৫০ লাখ টাকা তার সারা জীবনের জমানো টাকা। ফ্ল্যাটের নিচে থাকা তার ব্যবহারের গাড়িটির মালিকও তিনি নন, তার বন্ধুর গাড়ি ব্যবহার করেন। যে ফ্ল্যাটে থাকেন তাও তার শাশুড়ির বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
অন্যদিকে ওই দিন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেছিলেন, “পার্থের ঘোষিত আয়কর ফাইলে এসব টাকার ঘোষণা নেই। তাই আমদের মনে হয়েছে, এই টাকা অবৈধ আয় থেকে অর্জিত। আর আমরা মনে করি, গাড়ি ও ফ্ল্যাট তার নিজেরই, সে অবৈধ সম্পদ বৈধ করতে তাদের নামে ক্রয় করেছেন মাত্র।”
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ফেনসিডিলসহ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন থেকে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রামের তখনকার জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। সে সময় তিনি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের ঘুষ বাণিজ্যের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সেখানকার তৎকালীন ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের নাম বলেন।
ওই তথ্যের সূত্র ধরে দুদকের অনুসন্ধানী টিম রোববার পার্থ গোপালকে সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে ফ্ল্যাট থেকে ওই সব টাকা উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় পার্থ গোপাল বণিককে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।