সোমবার বিকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। অন্য দিকে তার পক্ষে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা।
দুই পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ আদালতের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে পার্থ গোপাল বণিককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আসামি পক্ষে জামিনের আবেদনে শুনানি করেন ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা গাজী শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রচি, সাবেক সভাপতি বিএনপি নেতা মাসুদ আহমদ তালুকদার, খোরশেদ আলম এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান হাওলাদার ও অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ।
কারাগারে পাঠানোর আবেদনে বলা হয়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা পাচারের উদ্দেশ্য আসামি নিজ ঘরে রাখেন। ওই টাকা নিয়ে তিনি দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। এছাড়া তিনি মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত বিনষ্টসহ সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি জামিন পেলে গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করতে পারেন, তদন্তেরও ব্যঘাত ঘটবে।
শুনানিতে জামিনের বিরোধিতা করেন দুদকের প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল ও মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
তারা বলেন, আয়কর ফাইল অনুযায়ী একবছরে তার বেতন থেকে আয় ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং ১৫ লাখ টাকা তিনি ব্যবসা থেকে আয় করেছেন। বাকি টাকার সবই অবৈধ উপায়ে অর্জন করা। আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হোক।
শুনানির সময় বিচারক কাঠগড়ায় থাকা আসামি পার্থ গোপাল বণিকের কাছে তার মূল বেতন কত জানতে চান। উত্তরে তিনি বলেন, ৩০ হাজার টাকা।
তার বাসা থেকে উদ্ধার করা টাকার উৎস জানতে চাইলে পার্থ বলেন, পোস্ট অফিসে এফডিআর করা বেতন-ভাতার ৩০ লাখ টাকা তুলেছেন তিনি।
আয়কর নথিতে টাকাগুলো দেখানো আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আইনজীবী ভুল করে টাকাগুলো দেখায়নি।
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ফেনসিডিলসহ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন থেকে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রামের তখনকার জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। সেসময় তিনি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের ঘুষ বাণিজ্যের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সেখানকার তৎকালীন ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের নাম বলেন।
ওই তথ্যের সূত্র ধরে দুদকের অনুসন্ধানী টিম সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে পার্থ গোপালকে রোববার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাকে নিয়ে তার ধানমণ্ডির নর্থ রোডের (ভূতেরগলি) ২৭-২৮/১ নম্বর বাসার বি/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করার পাশাপাশি তাকে গ্রেপ্তার করে দুদক।
সোমবার দণ্ডবিধির ১৬১, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) এবং মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।