বানভাসি মানুষ বেড়ে ৩০ লক্ষাধিক

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ১০ দিনের বন্যায় ২১ জেলার ৩০ লাখের বেশি মানুষ এখন ক্ষতিগ্রস্ত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2019, 06:49 PM
Updated : 17 July 2019, 06:53 PM

এরমধ্যে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিলেট, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বৃষ্টি কমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পানিও কমতে থাকায় পরিস্থিতিও উন্নতির দিকে কোথাও কোথাও।

তবে দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে বর্ষণ কমলেও পানির ঢলে দেশের নদ-নদীর ২৩টি পয়েন্টে এখনও পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

ধীরে ধীরে শনিবার থেকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশের উজানের এলাকাগুলোয় আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারি বর্ষণের আভাস নেই। তবে দেশের অভ্যন্তরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-পদ্মার পানি বাড়বে আরও ৪৮ ঘণ্টা।

এতে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। উন্নতি হতে পারে নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতির।

দুর্যোগ ব্যস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বন্যার বিস্তারের পাশাপাশি প্লাবিত এলাকায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ এখন ক্ষতিগ্রস্ত।

৫ জুলাই থেকে বন্যা পরিস্থিতির শুরু হয়। চলতি মাসের প্রথমার্ধের বন্যায় ২১টিরও বেশি জেলায় বিস্তার ঘটে। এখন প্রভাব পড়ছে মধ্যাঞ্চলেও।

বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কুড়িগ্রামে ৬ লাখ ৯ হাজার ৬০০ মানুষ পানিবন্দি

চট্টগ্রাম জেলায় বন্যা কবলিত ১৪ জেলার মধ্যে সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পানি কমে এখন পরিস্থিতি  উন্নতির দিকে। দুর্গত ৫ লাখ ২৮ হাজার ৭২৫ জন। ২০ হাজার ঘর-বাড়ি আংশিক-সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত। ১৪ জুলাই বন্যা থেকে পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে এ জেলায়।

বান্দরবানের ৫ উপজেলা প্লাবিত। ১০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। রোববার থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে সাঙ্গু-মাতামুহুরীর পানি এখনও বিপদসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে।

খাগড়াছড়ির ৪ উপজেলায় ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। পানি নেমে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এখানে ১৫ কিলোমিটার রাস্তাঘাট ক্ষতি হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়ি ঘরে ফিরছে।

রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্ত ১০ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে। ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে।

কক্সবাজার জেলার প্লাবিত ৭ উপজেলার পানি নেমে গেছে। ৩ লাখ ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ২৭৫ কিলোমিটার রাস্তা ও ৬ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও বিপদসীমার উপরে বইছে। নীলফামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা দুই উপজেলায় ২৮ হাজারেরও বেশি।

যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে বইছে।  ৮২ হাজার দুর্গত মানুষ। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে চারশ’ পরিবারও।

যমুনা নদীর পানি গাইবান্ধায় এখনও বিপদসীমার উপরে রয়েছে।  প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার মানুষ বানভাসি।

সিরাজগঞ্জে পানি বাড়ছে, ৯৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে

ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পয়েন্টে কুড়িগ্রামে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এ জেলায় ৬ লাখ ৯ হাজার ৬০০ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা এটি।

এছাড়া সিরাজগঞ্জে ৯৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে; পানিও বাড়ছে।

জামালপুরে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ জন পানিবন্দী রয়েছে। যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। ৯৩ হাজারেরও বেশি মানুষ বানভাসি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত ১১ উপজেলায় ১ লাখ ৬২ হাজারেরও বেশি মানুষ দুর্গত অবস্থায় রয়েছে। ফসলি জমি, মাছ ও রাস্তা, সেতু-কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে।

সিলেটের ১৩ উপজেলা বন্যা কবলিত। সাড়ে ৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ২৪ ঘণ্টায় পানি কমতে শুরু করায় পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।

মৌলভীবাজারের সব উপজেলার অংশ বিশেষ প্লাবিত হয়েছে।

হবিগঞ্জে ১১ হাজার ৫৪৭ জন; ফেনীতে ২০ হাজার ৩৭৫ জন; ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২২ হাজার ৫৭০ জন; শেরপুরে ৬৩ হাজার জন; টাঙ্গাইলে ৮৫ হাজার ৬৮২ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বৃষ্টি কমে এখন তাপপ্রবাহ

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে- ফরিদপুর, রাজশাহী, মংলা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর অঞ্চলের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বুধবার মংলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা  রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বৃষ্টি কমার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় গরমে দুর্গত এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাবের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।