যারা দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি এইটুকু আহ্বান করব- আজকের বাংলাদেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে যাদের অবদান রয়েছে তারা গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে আছে। আপনারা দেখবেন অনেকে তাদের ক্ষুদ্র অল্প একটু সম্পদ নিয়েও হাজারো মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাদের সহযোগিতা করে।
“এই ধরনের যারা অবদান রাখে দেশের কল্যাণে, জনগণের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে, মানুষের জন্য আমি মনে করি তাদেরকে আমাদের খুঁজে খুঁজে বের করা প্রয়োজন। তারা যে মানব কল্যাণে অবদান রেখেছেন সেজন্য তারা পুরস্কারপ্রাপ্তির যোগ্য।”
শেখ হাসিনা বলেন, “স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারি এবং আর্থসামাজিকভাবে যেন আমরা উন্নত হতে পারি, উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে যেন আমরা একটা মর্যাদা ফিরে পেতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এবং দেশবাসী তার সুফল পাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ এটিএম জাফর আলম (মরণোত্তর), মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক (মরণোত্তর), অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ (মরণোত্তর), সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ব্যারিস্টার শওকত আলী খান (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং ডা. কাজী মিসবাহুন নাহার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।
চিকিৎসায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা বেগম, সমাজসেবা/জনসেবায় অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সংস্কৃতিতে মুর্তজা বশীর, সাহিত্যে হাসান আজিজুল হক, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে অধ্যাপক হাসিনা খাঁনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শ্রেণিতে।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। পুরস্কারজয়ী প্রত্যেকে পেয়েছেন ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, তিন লাখ টাকার চেক ও একটি সম্মাননাপত্র। |
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি নিজেকে ধন্য মনে করি যে গুনীজনদের আমরা সম্মান দিতে পেরেছি। তারপরও আমরা জানি, অনেকজন রয়ে গেছেন তাদেরকে আমরা দিতে পারছি না।”
স্বাধীন বাংলাদেশের বিনির্মাণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করার পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি দেশ গঠনে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এক সময় বাংলাদেশের কথা শুনলেই বিশ্ববাসী বলত দুর্ভিক্ষের দেশ, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। একটা অবহেলার চোখে দেখত।
“সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের খুব কষ্ট লাগত শুনতে।… এই স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিনের সংগ্রাম জাতির পিতা করেছেন বা আমরাও ওই সময়ে ভুক্তভোগী। চড়াই উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন গেছে। আমরাও চলার পথে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের এক দশকের চেষ্টায় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। মাথাপিছু আয় এ অর্থবছরে বেড়ে ১৯০৯ ডলার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
“আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে বাংলাদেশের কথা শুনলে মানুষ সম্মানের চোখে দেখে, এটুকুই আমার তৃপ্তি। বাংলাদেশটাকে মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় নিয়ে আসেতে আমরা সক্ষম হয়েছি।”
“অন্তত এইটুকু মানসিক শক্তি আমাদের ছিল যে এটাকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। দুর্নীতি কোথায় হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে হবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সেটা প্রমাণ করতে পারেনি। তারা ব্যর্থ হয়েছিল।”
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শফিউল আলমের পরিচালনায় এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।