কোথাও গোলযোগের কোনো খবর নেই, অনিয়মের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগও কেউ করেননি; তারপরও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থীদের কণ্ঠে ঝরল হতাশা।
Published : 28 Feb 2019, 03:17 PM
এই হতাশা ভোটার না পাওয়ার হতাশা।
ভোটাররা কেন কেন্দ্রে আসেননি, তার নানা রকম ব্যাখ্যা এসেছে প্রার্থীদের কাছ থেকে। কেউ বলেছেন বৈরী আবহাওয়ার কথা, কেউ আবার নির্বাচন বর্জন করা বড় দলগুলোকে দুষেছেন।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহিম মনে করেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ‘আতঙ্ক’ ভোটাররা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি’।
আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে বৃহস্পতিবার এই উপনির্বাচনে প্রার্থী আছেন মোট পাঁচজন। তাদের মধ্যে কেবল রহিমই স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকিরা আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, এনপিপি ও পিডিপির মনোনীত।
বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনে এ উপ নির্বাচনের প্রচারপর্ব ছিল একেবারেই নিরুত্তাপ। ভোটারদের মধ্যেও এ নির্বাচন খুব বেশি আগ্রহ জাগাতে পারেনি। তার মধ্যে সকালের বৃষ্টির কারণে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম।
আগের রাতে মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে অগ্নিকাণ্ডে পোড়া বস্তি এলাকা পরিদর্শন করে সকাল সোয়া ১০টায় ভাসানটেক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান টেবিল ঘড়ি মার্কার প্রার্থী রহিম।
পরে তিনি বলেন, “আমি যখন আসি, কেন্দ্র ছিল ভোটারশূন্য। এ কেন্দ্রে আমিই প্রথম ভোট দিয়েছি। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রভাব পড়েছে এখানে। আগে যেভাবে ভয়ের মধ্যে ছিল, এখনও ভোটারদের মাঝে ভয় রয়ে গেছে।”
তবে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে এ উপ নির্বাচনে কোনো অনিয়ম দেখেননি বলে জানান এ স্বতন্ত্র প্রার্থী।
আব্দুর রহিম বলেন, “বড় দলগুলো ভোটে আসেনি। তবুও ক্ষমতাসীন দলের কিছু অতি উৎসাহী লোকের কারণে ভোটার উপস্থিতি নেই। বলা যায়, অতি উৎসাহীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। আমি ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে চেয়েছি; এজেন্ট দিতে চেয়েছি। কিন্তু এজেন্ট হতেই রাজি না অনেকে। আতঙ্ক কাটেনি ভোটারদের মধ্যে।”
সবার সহযোগিতায় নির্বাচনকে উৎসবমুখর করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার মত স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেক থাকতে হবে। সরকার, দল, ইসি সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। ভোটারদের ভয় দূর করতে হবে। ভোট একটা আন্দোলন; আমি তো ভোট বর্জনে বিশ্বাসী নই। সেজন্য ভোটের আমেজ রাখতে এগিয়ে আসতে হবে।”
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির প্রার্থী আনিসুর রহমান দেওয়ান সকাল সাড়ে ১০টায় ভোট দেন নয়াটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
তিনি বলেন, “ভোটার খুবই কম। প্রিজাইডিং অফিসার জানিয়েছেন আমার কেন্দ্রে ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। আমার ভোটকক্ষে আমি সম্ভবত দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভোটার।”
আনিসুর রহমানের ধারণা, উপ নির্বাচন নিয়ে অনাগ্রহের কারণেই উপস্থিতি কম। বৃষ্টিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
“ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। সবাই আছে, শুধু ভোটার কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে জনগণের ভেতরে আগ্রহ নেই। আমি ১৫-২০টি কেন্দ্র ঘুরেছি, সবখানে একই অবস্থা।”
পিডিপির প্রার্থী শাহীন খান বেলা ১২ টায় রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন।
তিনি বলেন, “বৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতি কম। আমার কেন্দ্রে ১৫তম ভোটার হিসেবে আমি ভোট দিলাম। উপ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহও নেই মানুষের। তবে কাউন্সিলরদের ভোট যেখানে সেখানে বেশ আমেজ রয়েছে।”
কোথাও অনিয়ম দেখেননি জানিয়ে শাহীন বলেন, শেষ পর্যন্ত এই সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে জয়ের বিষয়ে তিনি আশাবাদী।
“আমার এজেন্ট সবখানে রয়েছে। বেলা ২টা পর্যন্ত ৩৭টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। দুয়েকটি কেন্দ্রে ছোটোখাটো ঘটনা থাকলেও তা থেমে গেছে। সব মিলিয়ে ৫% এর বেশি ভোট পড়বে বলে মনে হয় না।”
মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাফিন আহমেদের ভাষায়, এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ‘লক্ষ্যণীয়ভাবে কম’।
“আমি ব্যাখ্যা দিতে পারব না, তবে আশানুরূপ সাড়া দেখতে পাচ্ছি না ভোটারদের মধ্যে।”
বেলা ১২টা ২০ মিনিটে গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কেন্দ্রে নিজের ভোট দিয়ে শাফিন বলেন, সকালে বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে তিনি কিছু অনিয়ম দেখেছেন।
তবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়ে তিনি সে সময় বলেন, “আমি মাঠে থাকছি। পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে বিকালে সব জানাব।”
বৃষ্টিভেজা সকালে প্রায় ভোটারশূন্য কেন্দ্রে নিজের ভোটটি দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম ‘গরম চা আর গরম খিচুড়ি’ খেয়ে সবাইকে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান।
জয়ের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এ কেন্দ্রে তুলনামূলকভাবে ভোটার কম। এখানে শুধু মেয়রের ভোট রয়েছে; যেসব এলাকায় কাউন্সিলরদের ভোট রয়েছে তাতে উপস্থিতি ভালো হবে। সবাই আসুন, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন”
ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচনের পাশাপাশি দুই সিটির নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদেও এদিন নির্বাচন হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টায় উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে আইইএস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিজের ভোট দিতে উত্তরের ভোটার সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটার না আসার দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। এ দায় রাজনৈতিক দলগুলোর এবং প্রার্থীদের।
“আমি আগেই বলেছি, দুটি কারণে ভোটার উপস্থিতি কম থাকতে পারে। একটি হচ্ছে স্বল্প সময়ের জন্য এই নির্বাচন, এক বছর পরে আবার নির্বাচন হবে- সেজন্য কম হতে পারে। আর সব রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় ভোটাররা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে না ভাবলে কম হতে পারে।”