পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ আগুনে নিহত অন্তত ৭০

পুরান ঢাকার চকবাজারে চার তলা একটি বাড়িসহ কয়েকটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কামাল তালুকদার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2019, 05:28 PM
Updated : 21 Feb 2019, 11:31 AM

বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হওয়ার নয় ঘণ্টা পরও তা পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে। সকালে হেলিকপ্টারে করে উপর থেকে পানি ছিটানোর পর আগুন আর দেখা যাচ্ছে না।  

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও ভেতরে এখনও জ্বলছে। রাসায়নিকসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন পুরো নেভাতে অনেক সময় লাগবে।  

চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ওই ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষ আহত হয়েছেন। ভোরের দিকেও দগ্ধ অবস্থায় লোকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ বলেন, উদ্ধারকাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর হতাহতের সঠিক তথ্য জানা যাবে।

ছবি: রয়টার্স

রাত সাড়ে ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাফিজ নামে একজন তার তিন স্বজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ভাগ্নি, ভাগ্নির জামাই ও তাদের দুই মেয়ে ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। ওদের বড় ছেলেটাকে খুঁজে পেয়েছি। বাচ্চাটার একপাশ পুড়ে গেছে। বাকি তিনজনকে এখনও খুঁজে পাইনি। সব মেডিকেলে খুঁজতেছি, কোথাও পাচ্ছি না।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তত ৪০ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে অগ্নিদগ্ধ ৯ জন রয়েছেন বার্ন ইউনিটে। সেখানে থাকা সোহাগ নামে এক যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

স্থানীয়রা জানায়, চুড়িহাট্টা মসজিদের পাশে প্রয়াত ওয়াহেদ চেয়ারম্যানের চার তলা ভবনটিতে প্রথমে আগুন লাগে। তারপর তা পাশের রাজমহল নামে একটি রেস্তোরাঁ এবং সরু রাস্তার উল্টো দিকের তিনটি ভবনে ছড়ায়।

যে ভবনে প্রথম আগুন লাগে, তার নিচতলায় একটি দোকান রয়েছে, দোতলায় রয়েছে বিভিন্ন প্রসাধন-প্লাস্টিক সামগ্রীর গুদাম। উপরের দুটি তলায় রয়েছে বাসা।

ছবি: রয়টার্স

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আগুন লাগার পরপরই চার তলা ভবনটির সামনে থাকা বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ ঘটে; ওই সময় রাস্তায় থাকা কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরে যায়।

পুরান ঢাকার ওই সংকীর্ণ সড়কে রাত সাড়ে ১০টায় অগ্নিকাণ্ড শুরুর সময়ও ছিল যানবাহন আর মানুষের ভিড়। তাছাড়া মসজিদের সামনে ফুটপাতের উপর দোকান, আনাস হোটেলের সামনে একটি ফলের দোকান এবং আরও কয়েকটি ভাসমান দোকান ছিল।

মসজিদের উত্তর পাশে, সামনে, দক্ষিণপাশের রাস্তায় ছিল গাড়ি আর চলতি পথের যাত্রীদের ভিড়।

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীনদের নাম

কীভাবে এই আগুন লাগল, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এজন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক।

আনাস হোটেলের কর্মচারী সাইদুর রহমান ঘটনার সময় একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা বলেছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই বিস্ফোরণের পরপরই বিদ্যুৎ চলে যায়। পরে মোবাইল ফোনের বাতি জ্বালিয়ে তিনি কোনোক্রমে হোটেল থেকে বের হন।

ছবি: রয়টার্স

হায়দার বক্স লেনের বাসিন্দা বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিস্ফোরণের শব্দের সময় তিনি একটি প্রাইভেটকারকে ছিটকে উপরের দিকে উঠে যেতে দেখেন।

তিনি বলেন, ওই সময় রাজমনি হোটেলের সামনের রাস্তায় কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল। ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণের পর ওই গ্যাস সিলিন্ডারেও আগুন লাগে। পরে ভবনে ও রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আগুন লাগা চারতলা ভবনের দক্ষিণের ভবন কাটারা সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। এ কারণেও ওই রাস্তায় গাড়ি ও মানুষের ভিড় বেশি ছিল।

ছবি: রয়টার্স

তিনি বলেন, বিস্ফোরণের পর সবাই দিগ্বদিক ছুটোছুটি শুরু করে। এর মধ্যে আগুনে দগ্ধ হয়ে অনেকে রাস্তাতেই মারা যায়।

শরিফ নামে একজন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “আগুন যেভাবেই লাগুক, দোতলার গুদামে দাহ্য পদার্থ থাকায় রাস্তার দুই দিকের ভবনে তা ছড়িয়েছে।”

অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগুনে মোট পাঁচটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাহিনীর মহাপরিচালক আলী আহম্মেদ বলেন, সরু ওই সড়কে ভবনগুলো ঘেঁষাঘেষি করে তৈরি করায় আগুন নেভানোর কাজ করতে বেগ পোহাতে হয় অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর কর্মীদের। পাশাপাশি ওই এলাকার দোকান ও গুদামগুলোতে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

নয় বছর আগে পুরান ঢাকার নিমতলীতেও অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল রাসায়নিকের গুদামের কারণে। তাতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছিলেন।