বাণিজ্যিক অনলাইন প্লাটফর্ম ‘সহজ ডটকম’র মূল প্রতিষ্ঠান ‘সহজ লিমিটেড’র অপারেশন ডিপার্টমেন্টের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান ভারতীয় নাগরিক রাজিব ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার রুল হয়েছে হাই কোর্ট থেকে।
Published : 05 Feb 2019, 07:26 PM
তিনি ওয়ার্ক পারমিট ও যথাযথ ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে ‘সহজ লিমিটেডে’ কাজ করছেন দাবি করে একটি রিট আবেদনে মঙ্গলবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করে।
আদেশে জানতে চাওয়া হয়, কোনো ওয়ার্ক পারমিট ও যথাযথ ভিসা ছাড়া কাজ করে যাওয়া সহজ লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজিব ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও তার অবৈধ চাকরির মাধ্যমে ফাঁকি দেওয়া কর আদায়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না?
ভারতীয় নাগরিক রাজিব ও সহজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা কাদিরসহ স্বরাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা), বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রাইড শেয়ারিং অ্যাপ সহজ ডটকমের (Shohoz.com) মূল প্রতিষ্ঠান সহজ লিমিটেড (Shohoj Limited) অনলাইন ভ্রমণ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। মালিহা কাদির এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
আয়কর আইনজীবী ইক্তান্দার হুসাইন হাওলাদার গত মাসে হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন; তার প্রাথমিক শুনানির পরই আদালত রুল দিল।
আদালতে শুনানিতে রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। রষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।
খুরশীদ আলম খান বিনিয়োগ বোর্ড নীতিমালা ২০১১ এর ৫ (ক) উদ্ধৃত করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশে যে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হলে প্রথমে বিডা থেকে বিদেশিদের ওয়ার্ক পারমিট নিতে হয়। পরে কাজের ধরন অনুযায়ী কাজের ভিসাও নিতে হয়। কিন্তু রাজিব ভট্টাচার্য্য তার ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন।
তার ভাষ্য, রাজিব বাংলাদেশেই অন্য একটি ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ওয়ার্ক পারমিট নিয়েছিলেন। পরে তিনি তার কর্মস্থল পরিবর্তন করলেও নতুন করে ওয়ার্ক পারমিট নেননি। তাছাড়া আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৫৬ ধারা অনুযায়ী বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়, তাও দেননি তিনি।
অ্যাডভোকেট খুরশীদ বলেন, “রাজিব সহজ লিমিটেডে কত বেতন পান, কর্তৃপক্ষ (সরকার) তা জানে না। এর ফলে যেটা হয়েছে, তিনি অবৈধভাবে কাজ করছেন এদেশে আবার রাজস্বও ফাঁকি দিচ্ছেন। এর ফলে ফাইনালি ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের দেশ। আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তার কাজের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুল জারি করেছেন।”
রিট আবেদনে বলা হয়, সহজ লিমিটেডে যোগ দেওয়ার আগে রাজিব ভট্টাচার্য্য বাংলাদেশেই ইউএসবি এক্সপ্রেস লিমিটেডে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন তিনি ইউএসবি কাজ করার ওয়ার্ক পারমিট নিয়েছিলেন।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর ইউএস বাংলা বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর তাদের কোম্পানি থেকে পদত্যাগ করেন রাজিব।
ওই চিঠিতে রাজিবের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের আবেদন জানিয়ে ইউএসবি এক্সপ্রেস লিমিটেডের কর্মকর্তা হিসেবে তার নাম মুছে ফেলার আবেদনও করা হয়েছিল।
তার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরে ৪ ডিসেম্বর বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজিবের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে বলে রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রিট আবেদনে আয়কর আইনজীবী ইক্তাদার হাওলাদার বলেছেন, এরপর অবৈধভাবে এদেশে কাজ করে যাওয়া এবং রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ তুলে রাজিব ভট্টাচার্য্য ও সহজ লিমিটেডকে উকিল নোটিস দিয়েছিলেন তিনি। কিন্ত তারা কোনো জবাব না দেওয়ায় তিনি আদালতে আবেদন করেন।