জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রতিশ্রুত অর্থ দেওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত দেশগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও এ খাতে কর্মরত বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা বলছেন, বৈশ্বিক তহবিল ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ থেকে অর্থ পেতে আগে নিজেদের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
Published : 02 Feb 2019, 08:09 PM
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) কমিউনিটি ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রকল্পের (সিসিসিপি) পরিচালক ফজলে রাব্বি সাদিক আহামেদের মতে, প্রকল্প প্রণয়নের সক্ষমতা থাকলেও তা বাস্তবায়ন সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশের। এ জায়গায় উন্নতি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ প্রতিবছর এ কারণে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির মুখে পড়ছে।
যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে পারলে এই ক্ষতি আরও বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন ফজলে রাব্বি।
“২ শতাংশ যদি হারায় আমাদের জিডিপির সাইজ হচ্ছে এখন ২৮০ বিলিয়ন তাহলে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রতিবছর। আল্লাহ না করুক এটা যদি কোনো কারণে ৫ শতাংশ হয় তাহলে বর্তমান জিডিপির হিসেবেই বছরে ক্ষতি হবে ১৫ বিলিয়ন ডলার।”
বড় ধরনের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষায় যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। তবে তার জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থ।
২০১৫ সালে সরকারের একটি নথিতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ঝুঁকি কমাতে ২০৩০ সাল নাগাদ ১৫ বছরে অন্তত ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
“এখন আমরা এই টাকাটা কীভাবে পেতে পারি? আমাদের একটা ফান্ড আছে যেটার নাম হচ্ছে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড। যেখানে প্রতিবছর সরকার কিছু টাকা দেয়। গত বছর (২০১৭ সালে) ৩০০ কোটি টাকার মতো দিয়েছে। কিন্তু এই টাকা তো কিছুই না। আমরা এখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সোর্স থেকে টাকা আনার চেষ্টা করছি,” বলেন ফজলে রাব্বি সাদিক আহামেদ।
তার মতে, আন্তর্জাতিক ফান্ড থেকে বাংলাদেশের টাকা পাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি।
“ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাপলক্রফট প্রতিবছর যে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে তার মধ্যে দেখা যায়, ১ থেকে ১০ এর মধ্যে সব সময় বাংলাদেশ থাকে। তার মানে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।”
এসব গবেষণার তথ্যকে সামনে এনে বাংলাদেশ সহজেই আন্তর্জাতিক ফান্ডগুলো থেকে অর্থ পেতে পারে বলে মনে করেন ফজলে রাব্বি।
তার জন্য নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক সোর্সগুলো থেকে টাকা আনতে হলে আমাদের যে ক্যাপাসিটি আছে তাকে আরো বাড়াতে হবে। আমাদের প্রজেক্ট ডেভলপমেন্টের ক্যাপাসিটি আছে কিন্তু প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ক্যাপাসিটি আরো বাড়াতে হবে যেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বা সবাই বুঝতে পারে, বাংলাদেশ নিজে তার জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যাগুলো থেকে কাটিয়ে উঠতে প্রকল্পগুলো নিজেরাই ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন করতে পারে।”
কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে সততাও দরকার বলে মনে করেন তিনি।
তহবিল গঠনের সময় উন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা সময়মতো পূরণ না হওয়ায় বিভিন্ন সময় অসন্তোষ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই ফান্ড থেকে বাংলাদেশের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি প্রকল্পে ৯০ মিলিয়ন ডলারের (৮০০ কোটি টাকা) মতো অনুমোদন হয়েছে।
গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য একটা বড় সুযোগ হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন পিকেএসএফের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “একটা নীতিমালা হয়েছে অভিযোজনের জন্য যে টাকাটা আসবে তার ফিফটি পার্সেন্ট টাকা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো পাবে। যেহেতু আমরা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ সেখানে আমাদের অবস্থ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো।”