বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গঠিত ওই কমিটি বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ২৬টি সুপারিশ করে, তার মধ্যে সাতটি ছিল সিটিং সার্ভিস নিয়ে। কিন্তু এক বছরেও এসব সুপারিশ আলোর মুখ না দেখায় খোদ কমিটির সদস্যরাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় এই সময়ে সিটিং সার্ভিসের দৌরাত্ম্য কমা তো দূরের কথা উল্টো অধিকাংশ রুটেই সব পরিবহনই ‘সিটিং সার্ভিস’ হয়ে গেছে।
কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন কোম্পানির কতগুলো বাস সিটিং, কতগুলো নন-সিটিং চলবে, তা ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব ঢাকা মহানগর আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (মেট্রো আরটিসি) হাতে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন তারা। এখন সেই মেট্রো আরটিসিতেই আটকে আছে সিটিং সার্ভিসের ভবিষ্যৎ।
এখানেই সুপারিশগুলো আটকে আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, যিনি নিজেও মেট্রো আরটিসির সদস্য।
সুপারিশগুলো এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিআরটিএ গঠিত ওই কমিটির সদস্য দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটি তো সরকার করেছে, আমরা করিনি। পুরো ব্যাপারটায় তাদের উৎসাহ ছিল। তারা আমাদের নিয়োগ করেছে এবং বারবার বলেছে- ‘আপনাদের সুপারিশটা সিরিয়াসলি নেওয়া হবে।’ এজন্য আমরা শুরু থেকেই এটা নিয়ে কাজ করেছি।
“আমরা প্রথম মিটিং থেকেই তাদের বলেছি যে, আপনারা আমাদের নিচ্ছেন, আমাদের কথা রাখবেন কি না? তখন তারা বলেছিল, তারা বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করবেন। তাদের আগ্রহেই আমরা সেখানে গেলাম, একটা সুপারিশ করলাম। প্রায় এক বছর ধরে আর কোনো অগ্রগতি নেই। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আমাদের কাজ করেছি, এখন সরকার তাদের কাজ করুক। এটা বাস্তবায়ন করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।”
যানজটের শহর ঢাকায় সিটিং সার্ভিস নিয়ে বিশৃঙ্খলায় সমালোচনার মুখে এ বিষয়ে সুপারিশ করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিআরটিএ ২০১৭ সালের ৩ মে আট সদস্যের একটি কমিটি করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে।
২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, প্রতিবেদন পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তৈরি করা সুপারিশ প্রতিবেদন আকারে ওই বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিআরটিএতে জমা দেন। বিআরটিএ সেসব সুপারিশ পর্যালোচনা করে তা মেট্রো আরটিসিতে পাঠায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কমিটির সুপারিশ তারা পেয়েছেন। এ বিষয়ে বিআরটিএকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিআরটিএর একটা বৈঠক হয়। সেখানে বাস মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পক্ষের লোকজন ছিলেন। এ বৈঠকের পর সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করে ১৭ এপ্রিল তা মেট্রো আরটিসিতে পাঠানো হয়।
“কমিটির সুপারিশগুলোকে আমরা সংক্ষিপ্ত করেছি। এটা যারা বাস্তবায়ন করবে তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন করবে আরটিসি, কারণ রুট পারমিট দেয় তারা। আরটিসি মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে মিটিং করে তা বাস্তবায়ন করবে। এখন এর কী অবস্থা তা বলতে পারব না।
“আমাদের কাজ ছিল সুপারিশগুলো পাঠিয়ে দেওয়া, আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি, সেটা দেখা এখন আমাদের দায়িত্ব না।”
ওই সুপারিশের এখন কী অবস্থা জানতে চাইলে পরিবহন মালিক সমিতির নেতা এনায়েত উল্লাহ বলেন, গত বছরের ১৮ অক্টোবর মেট্রো আরটিসির সবশেষ বৈঠকে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মেট্রো আরটিসির চেয়ারম্যান ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার নির্বাচনের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন বলে জানান তিনি।
এনায়েত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনের আগে যে মিটিং হয়েছে সেখানেই এটি নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কমিশনার সাহেব বলেছেন- ‘না এটা ইলেকশনের পরে করেন’। আরটিসির চেয়ারম্যান হলেন তিনি। তিনি যদি বলেন নির্বাচনের পরে করবেন তাহলে সেখানে আমাদের কিছু বলার থাকে না। নির্বাচনের পরে এখন পর্যন্ত আর মিটিং হয় নাই।”
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এ সিদ্ধান্তটা পরে নেব বলেই মনস্থির করেছি। সবশেষ যে মিটিং করেছি সেখানেও ওটা আলোচনায় ছিল। কিন্তু আমরা বলেছি, এটা নিয়ে পরে আরও আলোচনা করব।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের আরও অনেক প্রায়োরিটি আছে, এইটা এই মুহূর্তে আমাদের প্রায়োরিটি না। কমিটি একটা সুপারিশ দিয়েছে, এখন সেটা মানব কি মানব না সেটা আমাদের কমিটিতে আলোচনা হবে।”