একটি কোম্পানির সব বাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে না চালিয়ে কিছু বাস সিটিং এবং বাকিগুলো নন-সিটিং হিসেবে পরিচালনা করতে হবে বলে সুপারিশে বলা হয়েছে।
রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বাস থাকবে কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত এপ্রিলে এই কমিটি করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএ। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সম্প্রতি বিআরটিএতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিটিং সার্ভিসের মাধ্যমে দীর্ঘদিন চলাচল করে যাত্রীরা অভ্যস্ত হওয়ায় এবং মালিকরা সিটিং সার্ভিস পরিচালনায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করায় সিটিং সার্ভিস এখন সময়ের চাহিদা।
তবে কোন কোম্পানির কতগুলো গাড়ি সিটিং, কতগুলো নন-সিটিং চলাচল করবে, তা ঠিক দেওয়ার দায়িত্ব আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি হাতে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
সরকার থেকে সিটিং সার্ভিসের ভাড়া ঠিক করে দেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,একটি রুটকে কয়েকটি স্ল্যাবে ভাগ করে স্ল্যাবভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ করা যেতে পারে।
সিটিং সার্ভিসের বাসগুলো আলাদা রংয়ের করে এসব বাসের জন্য সীমিত সংখ্যক স্টপেজ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
আগামী সপ্তাহে বিআরটিএতে কমিটির আরেকটি বৈঠকে এসব সুপারিশ চূড়ান্ত হবে বলে কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন।
বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেইফটি) মাহবুবে রব্বানীকে আহ্বায়ক করে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত, ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ট্রাফিক, উত্তর), একাত্তর টেলিভিশনের পরিচালক (সংবাদ) ইশতিয়াক রেজা, দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি শ্যামল সরকার, বিআরটিএ’র ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মাসুদ আলম,বাস মালিকদের প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান এবং শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে শাহজাহান বাবুল।
কমিটির সদস্য অজয় দাশগুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরিবহন খাতের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে সুপারিশগুলো তৈরি করা হয়েছে। গত সপ্তাহে তা বিআরটিএতে জমা দেওয়া হয়েছে।
“এগুলো মোটামুটি চূড়ান্ত। এরপরও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আমরা আগামী সপ্তাহে আরেকটি সভা করব।”
সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া নেওয়াসহ যাত্রী হয়রানির নানা অভিযোগের মধ্যে বাস মালিকরা গত ১৬ এপ্রিল থেকে সিটিং সার্ভিসে বাস চালানো বন্ধের ঘোষণা দেন। এরপর বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান শুরু করলে অনেক মালিক সড়কে বাস না নামালে দেখা দেয় পরিবহন সঙ্কট। পাশাপাশি ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে হাতহাতির ঘটনাও ঘটে বেশ কয়েক জায়গায়।
ওই অবস্থায় ১৯ এপ্রিল বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনার পর সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় বিআরটিএ। ১৫ দিন সিটিং সার্ভিস চলতে বাধা দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়।
এরপর ওই কমিটি করে তিন মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
তিনি বলেন, “এ রকম সুপারিশ আগেও অনেক হয়েছে। এখন আমরা সবাই যদি তৎপর নাই তাহলে এটা শুধুই একটা কাগুজে ব্যাপারে পরিণত হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিবেদনটি এখনও তার হাতে আসেনি। তবে কমিটি যেসব সুপারিশ করবে সেগুলো বাস্তবায়নে তারা আন্তরিক।
“রাজধানীর পরিবহন খাতে একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। শৃঙ্খলা আনার জন্যই আমরা এ কমিটি করে দিয়েছি। প্রতিবেদনে সুপারিশ যা-ই থাক, যাত্রী ভোগান্তি কমাতে আমরা এর বাস্তবায়ন চাই।”
তিনি বলেন, সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করে সেগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশনার জন্য মন্ত্রী ও সচিবের কাছে পাঠানো হবে।
“আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব সুপারিশের বাস্তবায়ন চাই।”
সিটিং সার্ভিসের পাশাপাশি নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতেও ২৬টি সুপারিশ করেছে কমিটি।
এগুলোর মধ্যে রুট পুনর্বিন্যাস করে ঢাকা শহরের সব বাসকে নির্দিষ্ট কয়েকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলাচলের ব্যবস্থা, রুট ফ্র্যাঞ্চাইজিং পদ্ধতিতে গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন করার কথা রয়েছে।
এছাড়া ভাড়া নৈরাজ্য, যাত্রী হয়রানি ও একচেটিয়া ব্যবসা ঠেকাতে প্রাইভেট অপারেটরদের অনুকূলে নতুন করে রুট পারমিট দেওয়া বন্ধ রেখে বিআরটিসির মাধ্যমে অধিক সংখ্যক নতুন দ্বিতল বাস চালু, প্রয়োজনে আন্তঃজেলা থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকা সিটিতে স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে।
বিআরটিসি বাসের লিজ প্রথা বাতিল করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাস সার্ভিস পরিচালনা, আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করে অধিক সংখ্যক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা সার্ভিসের প্রবর্তন করারও সুপারিশ করেছে কমিটি।
সব মিলিয়ে নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ২৬টি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।