নয় মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিআরটিসির জোয়ার সাহারা ডিপোর ফটক বন্ধ রেখে টানা দ্বিতীয় দিনের মত কর্মবিরতি পালন করছেন চালক ও শ্রমিকরা।
Published : 09 Jan 2019, 10:03 AM
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কর্মীদের ধর্মঘটের কারণে আগের দিনের মত বুধবারও এ ডিপো থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।
চালক ও শ্রমিকরা ডিপোর সামনে অবস্থান নিয়ে বেতন নিয়মিত করার পাশাপাশি বিআরটিসির রাষ্ট্রীয়করণসহ নানা দাবিতে শ্লোগান দিচ্ছেন।
জোয়ার সাহারা ডিপো থেকে টঙ্গী-মতিঝিল, আবদুল্লাহপুর-মতিঝিল, কুড়িল বিশ্বরোড-পাঁচদোনা রুটের একতলা ও দ্বিতল বাস চলাচল করে। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্টাফ বাস হিসেবেও এ ডিপোর বাস ব্যবহৃত হয়।
একতলা, দ্বিতল এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলিয়ে ১২০টি সচল বাস রয়েছে বিআরটিসির এই ডিপোতে। এসব যানবাহনের আয় থেকেই কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে লোকসানের কারণে প্রায় ৫০০ কর্মীর বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
সেই বকেয়া পরিশোধের দাবিতে মঙ্গলবার ভোরে জোয়ার সাহারা ডিপোর প্রধান ফটকে তালা দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন চালক ও শ্রমিকরা।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বিকালে ডিপোতে গিয়ে তিন মাসের মধ্যে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর বুধবার সকালে ডিপোতে এসে আবার বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
মিজানুর রহমান নামে একজন চালক বলেন, "চেয়ারম্যান স্যার আসছেন গতকাল, কিন্তু তিনি বেতন পরিশোধের কোনো কথা বলেন নাই। তিনি আবারও তিন মাসের সময় চান। এর আগেও এইরকম তিনবার সময় নিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয় নাই।
"তিনি যদি কমপক্ষে তিন মাসের বেতনও দিয়ে বলতেন, তাহলে একটা কথা ছিল। শুধু আশ্বাস দিলে তো আর সমস্যার সমাধান হবে না। বেতন পরিশোধ না করলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।"
আবুল হোসেন নামে আন্দোলনকারীদের মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, "আমাদের নয় মাসের বেতন বকেয়া। এ অবস্থায় বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। বাড়িওয়ালা প্রতিদিন কথা শোনায়। বছরের শুরুতে বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি চলছে। কিন্তু অনেকেই বেতন দিতে পারেনি। এইভাবে আর চলে না।”
কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগও এসেছে আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে আরেকজন চালকের কথায়।
তিনি বলেন, “কোনো কারণে গাড়ি নষ্ট হলে, ইঞ্জিন বিকল হলে, চাকা ফেটে গেলে সব ব্যাপারে আমাদের বেতন থেকে টাকা কেটে রাখা হয়। একটা আচড় লাগলেও টাকা কাটে। আমাদের কাছ থেকে টাকা কেটে রাখার পর সেই খরচের জন্য আবার অফিস থেকে বিল করে। গাড়ির কাগজপত্র না থাকার মামলা হলেও আমাদের কাছ থেকে টাকা কেটে নেয়। আমরা কয় টাকা বেতন পাই, তার থেকে আবার কেটেও নেয়?”
বিআরটিসির চালকদের বেতন সরকারের রাজস্ব খাত থেকে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সোহরাব নামে আরেক চালক বলেন, “বেশিরভাগ ডিপোর বেতন মাসের পর মাস বন্ধ। অথচ হেড অফিসের কর্মীদের বেতন মাসের ১ তারিখে হয়ে যায়। একই সংস্থায় দুই রকম আইন চলতেছে। এভাবে চলতে পারে না।”
বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়ার দাবি, কিছু টাকা বকেয়া থাকলেও গত সাত-আট মাস ধরে নিয়মিত বেতন হচ্ছে। তারপরও ‘সাত-আটটা লোক’ সরকারকে ‘অস্থিতিশীল’ করার জন্য ধর্মঘট করছে।
শ্রমিক-কর্মচারীরা এই কর্মবিরতি চালিয়ে গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বকেয়া বেতনের দাবিতে গতবছর জুলাই মাসেও একবার আন্দোলনে নেমেছিলেন জোয়ার সাহারা ডিপোর বাস চালকরা। তখন তাদের ১০ মাসের বেতন বকেয়া ছিল।
সারাদেশে বিআরটিসির ২২টি ডিপো আছে। এর মধ্যে ঢাকায় ডিপো আছে ছয়টি। এসব ডিপোতে প্রায় তিন হাজার চালক, টেকনিশিয়ান, অফিস সহকারী এবং নিরাপত্তারক্ষী কাজ করেন। সরকারি বেতন স্কেলে তারা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।
জোয়ার সাহারার মত ঢাকার অন্যান্য ডিপোতেও কর্মীদের বেতন কমবেশি বকেয়া রয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।