Published : 29 Dec 2018, 03:37 PM
এফসিওর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রিটেনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করায় অসামান্য অবদান রাখায় এবার ৯৩টি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে, যা রানির নববর্ষের সম্মাননা হিসেবে পরিচিত।
এই তালিকার ডিপ্লোমেটিক সার্ভিস অ্যান্ড ওভারসিজ নিউ ইয়ার ২০১৯ অনার্স ক্যাটাগরিতে জুলিয়ান ফ্রান্সিস পেয়েছেন ওবিই (অফিসার অব দা মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অব দা ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার) খেতাব।
আর সিস্টার লুসি হল্ট পেয়েছেন এমবিই (মেম্বার অব দা মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অব দা ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার) উপাধি।
বিদেশে ব্রিটেন এবং ব্রিটিশ জনগোষ্ঠির স্বার্থ রক্ষা, ব্রিটিশ নাগরিকদের সুরক্ষা, স্বোচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড, শিশু কল্যাণ, কূটনীতি, শিক্ষা, পরিবেশের সুরক্ষা, জনস্বাস্থ্য, জনসেবা, বিজ্ঞান ও গবেষণা নিরাপত্তা, বিশেষ শিক্ষা প্রয়োজিনীয়তা এবং খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ব্যক্তিদের এই ক্যাটাগরিতে সম্মাননা দেওয়া হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের দশক পূর্তির অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের একাত্তরের বন্ধু জুলিয়ান ফ্রান্সিস।
“বাংলাদেশের সমাজ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তিনি অতিদরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক মানবিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মূল ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। জুলিয়ান ফ্রান্সিস বাংলাদেশে অত্যন্ত সম্মানিত ও পরিচিত ব্যক্তিত্ব এবং তার কর্মকাণ্ডে সত্যিকার অর্থেই যুক্তরাজ্যের স্বার্থ প্রতিফলিত হয়েছে।”
রানির বিশেষ সম্মাননা পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, “এটা সত্যিকার অর্থেই অনন্য এক সম্মাননা। একই সঙ্গে আমি আমার অনেক সহকর্মীকে সম্মান জানাতে চাই, যারা বছরের পর বছর অনগ্রসরদের জীবনমান উন্নয়নে আমার ভাবনা এবং কার্যক্রম নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন।”
অর্ধ শতাব্দী ধরে এশিয়ায় নানা উন্নয়ন এবং ত্রাণ কার্যক্রমে জড়িত জুলিয়ান ফ্রান্সিস। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশেই তিনি কাজ করেছেন ২৭ বছর। ভারতেও কাজ করেছে ১৫ বছর।
১৯৬৮ সাল থেকে বিহারে অক্সফামের একটি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করতেন ফ্রান্সিস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিদের জন্য কাজ শুরু করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী শিবিরে কাজের জন্য ২০১২ সালে বিদেশি বন্ধুর সম্মাননা দেওয়া হয় জুলিয়ান ফ্রান্সিসকে।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সমর্থনে এবং পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় জুলিয়ান ফ্রান্সিস এ দেশে বাস করছেন ১৯৯৮ সাল থেকে।
গতবছর লুসি হল্টের হাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মানুষের সেবা করার জন্য ১৯৬০ সালে বরিশালের অক্সফোর্ড মিশনে যোগ দেন লুসি। এদেশে এসে অক্সফোর্ড মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পড়ানো শুরু করেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যশোর ক্যাথলিক চার্চে শিশুদের ইংরেজি পড়াতেন তিনি। যুদ্ধের কারণে চার্চ বন্ধ করে সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেও যাননি লুসি হল্ট। যুদ্ধাহত মানুষদের তিনি সে সময় সেবা দিয়ে গেছেন।
পরের বছরগুলোতে খুলনা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, গোপালগঞ্জ ও ঢাকায় শিশুদের মানসিক বিকাশ ও ইংরেজি শিক্ষার জন্য কাজ করেছেন লুসি হল্ট।
২০০৪ সালে অবসরের পরও তিনি দেশে ফিরে যাননি। বাংলাদেশে ও বরিশালের সঙ্গে তৈরি হয়েছে তার আত্মার সম্পর্ক। অবসর জীবনেও তিনি বরিশালে শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশকে ভালোবাসা এই দুটি মানুষকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে গতবছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে জুলিয়ান আর লুসির হাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদ তুলে দেন।