নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক দেড় শতাধিক কর্মকর্তার বৈঠকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি।
Published : 30 Nov 2018, 02:59 PM
নির্বাচনের সময় গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাড়িতে ওই বৈঠকে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘিত হয়েছে বলে বিএনপির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন তিনি।
রফিকুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে শেখ হাসিনা নির্বাচন করলেও লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি এক্ষেত্রে তার জন্য প্রযোজ্য হবে না।
“উনার বাসভবন ছেড়ে তো উনি যেতে পারবেন না। কারও সাথে দেখা করতে গেলে কোথায় দেখাটা করবেন? রাস্তার মধ্যে এসে? ওনার সাথে দেখা করতে এসেছেন, ওনার সাথে দেখা করে ওনার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। এখানে আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু আচরণবিধিমালা বুঝি, আমার কাছে মনে হচ্ছে না যে, এটায় কোনো ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘন হতে পারে।”
দেখা করার জন্য দলীয় কার্যালয় রয়েছে- সাংবাদিকরা বললে নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ভাই, বাসভবন ওটা। গুলাইয়েন না কিন্তু। কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়, আমি কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখা করব? তারা আসছেন আমার বাসাতে, আমাকে বাসাতেই দেখা করতে হবে।”
“তবে গণভবনে প্রচারণা চালালে আচরণবিধি ভঙ্গ হবে,” বলেন রফিকুল।
গত মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাকে সমর্থন দেয়ার কথা জানান সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত দেড়শ কর্মকর্তা।
কোনো রাজনৈতিক দলের চাপ অনুভব করছেন কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে রফিকুল বলেন, “আমরা যেহেতু নির্বাচন কমিশন, আমাদের প্রতি উভয়পক্ষের দাবি-দাওয়া আছে। ওনারা দাবি-দাওয়া প্রকাশ করছেন। এর মধ্যে যতটুকু যৌক্তিক দাবি হবে, ততটুকু আমরা বিবেচনা করব।”
বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, তারা ইসি ও আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন।
প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে একমাত্র সুযোগ হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট।
“যেদিন প্রার্থী চূড়ান্ত হবে, আমরা চেষ্টা করব যত দ্রুত সম্ভব পোস্টাল ব্যালট ছাপিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে দিতে। যিনি ভোট দিতে চাইবেন, তিনি রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করবেন। তাৎক্ষণিকভাবে ঠিকানাসহ খাম পাঠিয়ে দিবেন। পোস্টাল ব্যালট পাঠানোর পরে ভোটার মার্কাটা চিহ্নিত করে পাঠাবেন।”
ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল বলেন, সিইসি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রশাসনের রদবদলের বিষয়ে তিনি বলেন, “সব ওসিকে, সব ডিসিকে বদলাতে বিশাল বাজেটের দরকার হবে। এতে সরকারের কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়ে যাবে। আর সব ওলটপালট করে কি তাদের মধ্যে পেশাদারিত্ব আনা যাবে?
“আমরা কিন্তু সরকার নই। আমরা নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকালীন হোক বা নরমাল হোক- একটা সরকার কিন্তু আছে। সেই সরকারের হাতেই কিন্তু নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত আছে। ওনাদের দায়িত্ব তো আমাদের পালনের কথা না।”
তবে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কেউ গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নেবে বলে জানান রফিকুল।
সব দলের অংশগ্রহণে সন্তুষ্ট এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “যে কোন দেশের গণতন্ত্রের জন্য এটা সুখবর। নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা, নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ। আমি এটাকে স্বাগত জানাই এবং ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মাধ্যম আরও বেশি বিকশিত হবে বলে মনে করি।”