জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের ভেতরে বসছে বিশেষ আদালত; আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
Published : 05 Sep 2018, 11:25 AM
বুধবার বেলা ১১টার পর কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার ৭ নম্বর কক্ষে নতুন এই এজলাসে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করবেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান।
কারাগারে আরেকটি ভবনের দোতলার একটি কক্ষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
আদালতের ভেতরে নতুন এজলাসে এই শুনানিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে কারাগারের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে আশপাশের দোকানপাট।
চকবাজার মোড়ে, বেগমবাজার মোড়ে ও আবুল হাসনাত রোডেও দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারা। বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। কারাগারের কাছে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার (পেট্রোল) সানোয়ার হোসেন বলেন, “পুলিশ স্বাভাবিকভাবেই সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে।”
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজার রায়ের পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পরিত্যক্ত এই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে রয়েছেন ৭৩ বছর বয়সী খালেদা।
তার বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানি এতদিন চলছিল কারাগারের কয়েকশ গজের মধ্যে বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কারা অধিদপ্তরের মাঠে বিশেষ এজলাসে।
কিন্তু এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ের পর খালেদা জিয়াকে এক দিনও দাতব্য ট্রাস্ট মামলার শুনানিতে হাজির করা হয়নি। প্রায় প্রতি তারিখেই আদালতকে তার অসুস্থতার কথা জানানো হয়েছে কারাগারের পক্ষ থেকে। ফলে বিচারের শেষ পর্যায়ে এসে মামলাটি আটকে রয়েছে সাত মাস ধরে।
সেখানে বলা হয়, “বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে। সেজন্য নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশেষ জজ আদালত-৫ নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এর প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হল।
“বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন বিশেষ মামলা নং ১৮/২০১৭ এর বিচার কার্যক্রম পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের কক্ষ নং ৭ এর অস্থায়ী আদালতে অনুষ্ঠিত হইবে।”
খালেদা জিয়ার দল বিএনপি কারাগারে আদালত বসানোর সিদ্ধান্তকে ‘সংবিধান পরিপন্থি’ আখ্যায়িত করে বলেছে, তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি’ দেবে।
জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেছিল দুদক।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশীদ আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর শুরু হয় বিচার।
দীর্ঘদিনেও বিচার শেষ না হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা খালেদার আইনজীবীদের সময়ক্ষেপণকে দায়ী করে আসছেন। অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের ইন্ধনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে এই মামলাটি করা হয়েছে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে রয়েছেন। সর্বশেষ দিনের শুনানিতে তার জামিনের মেয়াদ ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিচারক আখতারুজ্জামান।