অর্থাভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন একাত্তরের যুদ্ধদিনের কণ্ঠযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম।
Published : 20 Jul 2018, 09:31 PM
এই দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা নয়, ভক্তরা পাশে দাঁড়াবেন বলে আশা করছেন তিনি।
৭২ বছর বয়সী এই শিল্পী শুক্রবার জানান, সম্প্রতি ভারতের ভেলোরে নারায়ণী হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রোস্টেটে ক্যান্সার ধরা পড়ে তার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।তার চিকিৎসার গিয়েছিলেন নারায়ণী হাসপাতালে।
“সেখানে চিকিৎসক দেখার পর রক্ত ও মূত্র পরীক্ষায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরে টাকা না থাকায় সেখানে বায়োপসি করাতে পারিনি।”
ঢাকা ফিরে ধানমন্ডিতে মেডিনোভা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সুজেয় শ্যাম।
চিকিৎসার জন্য আবার ভারত যেতে চান কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অর্থাভাবের কারণে ঢাকাতেই চিকিৎসা করাতে পারছি না। এখন ভারত যেতে পারব কি না জানি না।”
শিল্পী ভারতে যেতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
এ বিষয়ে সুজেয় শ্যাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাইনি। আমার সাংবাদিক বন্ধুরা আমার জন্য যতটুকু খবর প্রচার করবেন, তাতে যদি আমার গানের ভক্তরা এগিয়ে আসেন…।”
১৯৪৬ সালে সিলেটে জন্ম নেওয়া সুজেয় শ্যাম সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক পান। তার আগে ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক পান তিনি।
দশ ভাই বোনের মধ্যে সুজেয় শ্যাম ষষ্ঠ। তার বাবা, মা ও ভাই বোনেরাও বেতারে গান করতেন।
গিটার বাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান চট্টগ্রাম বেতারে কর্মজীবন শুরু হয় সুজেয় শ্যামের।পরে তিনি ঢাকা বেতারে যোগ দেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে থাকাকালে মোট নয়টি গানে সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম, যেগুলো একাত্তরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাওয়া হয়েছিল।
এর মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘ওরে শোনরে তোরা শোন’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আজ রণ সাজে বাজিয়ে বিষাণ’। ছিল বিশ্বপ্রিয়র লেখা ‘আহা ধন্য আমার’, কবি দিলওয়ারের লেখা ‘আয়রে চাষী মজুর কুলী’।
তার সুর করা গানের মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ এবং ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গান দুটি যে কোনো জাতীয় দিবসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। কিন্তু বাকি সাতটি গান এখন আর তেমন গাওয়া হয় না বলে জানান সুজেয় শ্যাম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন শেষ জীবনে ইচ্ছা, এই গানগুলো বেঁচে থাকুক মানুষের মাঝে। ফিরে আসুক হারিয়ে যাওয়া স্বাধীন বাংলা বেতারের বাকি গানগুলোও।”
সুজেয় শ্যাম জানান, রবীন্দ্র-নজরুল-লালন সংগীতের বাইরে স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্য লেখা ও সুর করা মোট গানের সংখ্যা দেড়শর মত।
“এরই মধ্যে অনেক গান হারিয়ে গেছে বা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। তবে এখনও সঠিকভাবে চেষ্টা করলে সেই গানগুলো ফিরে পাওয়া সম্ভব। এ বিষয়ে আর দেরি করা ঠিক নয়। সরকার বা বেসরকারি তরফে দ্রুত এই ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া দরকার।”
১৯৬৯ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন সুজেয় শ্যাম। ঢাকাই চলচ্চিত্র সংগীতে অবদানের জন্য তিনবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
বাংলাদেশ বেতারের প্রধান সঙ্গীত প্রযোজক পদ থেকে ২০০১ সালে অবসরে যান সুজেয় শ্যাম।
এরপর ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত ৪৬টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান’ শিরোনামে একটি অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন তিনি।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আরও ৫০টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান-২’ নামে আরেকটি অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন শিল্পী।
‘টুনাটুনি অডিও’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।