এমন জীবন কোনো শিশুর প্রাপ্য নয়: প্রিয়াঙ্কা

রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফেসবুক লাইভে রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে কক্সবাজার থেকে ফিরে গেছেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2018, 12:33 PM
Updated : 24 May 2018, 12:36 PM

তিনি বলেছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে এই রোহিঙ্গা শিশুরা যে অনিশ্চিত জীবন কাটচ্ছে, তা ‘কোনো শিশুরই প্রাপ্য নয়’।

ভারতীয় এই অভিনেত্রী বলেছেন, আশ্রয় কেন্দ্রে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এই শিশুদের যত্ন নেওয়া এখন বিশ্বের দায়িত্ব,  এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব।

বিশ্ব সেই দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না এলে রোহিঙ্গাদের একটি প্রজন্ম পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে  বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন তিনি।

জাতিসংঘ সংস্থা ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে সোমবার বাংলাদেশে আসেন প্রিয়াঙ্কা, বলিউড ছাড়িয়ে যার পদচারণা এখন হলিউডেও।

গত চার দিনে তিনি উখিয়া ও টেকনাফের ১০টি শরণার্থী ক্যাম্প এবং সীমান্তের কাছের রোহিঙ্গা আগমনের ট্রানজিট পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন তাদের বাস্তবতা, তাদের সঙ্কট।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রিয়াঙ্কা ফেইসবুক লাইভে আসেন।

তিনি বলেন, এই রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন বিশ্বের অন্যতম বড় শরণার্থী শিবির। যতদূর চোখ যায় কেবল শরণার্থীদের ঝুপড়ি ঘর। প্রায় সাত লাখ লোক মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ৬০ শতাংশই, অর্থাৎ প্রায় ৪ লাখই শিশু, যাদের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।

“তারা কোন দেশ থেকে এসেছে, কোন পরিস্থিতিতে এসেছে, তাদের ধর্ম কী, গোত্র কী- এসব আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার কাছে একটি শিশু হল শিশু। আর প্রত্যোক শিশুরই বেড়ে ওঠার অধিকার আছে।”

আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এই পলিথিনের ছাউনিতে রোহিঙ্গা কীভাবে টিকে থাকবে, পাহাড়ের গাছ কেটে বানানো এই ক্যাম্প ভূমিধসের কবরে পড়লে কী অবস্থা হবে- সেই শঙ্কায় উৎকণ্ঠিত প্রিয়াঙ্কা বিশ্বকে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেন। 

ফেইসবুক লাইভেই কুতুপালংয়ে  শিশুদের জন্য খোলা ইউনিসেফের একটি ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেসে’ গিয়ে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রিয়াঙ্কা। তাদের ছবি আঁকা দেখেন, করেন খুনসুটি।

তিনি বলেন, এই শিশুরা যে সহিংসতা দেখে এসেছে, তাতে তাদের স্বাভাবিক শৈশব হারিয়ে গেছে। তারপরও ইউনিসেফের ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস’গুলোতে তারা হাসছে, খেলছে, ছবি আঁকছে।

কিন্তু এই সুযোগ তারা পাচ্ছে দিনে দুই ঘণ্টা। বাকি সময় তারা থাকছে ঝুপড়ি ঘরে, নইলে বাইরে বাইরে ঘুরছে। শরণার্থী শিবিরে এটাই তাদের জীবন।

এই শিশুরা জানে না- কখন তারা আবার খাবার পাবে। নিরাপদ পানি, আশ্রয়, পয়নিষ্কাশনের মত মৌলিক চাহিদাগুলোও পূরণের উপায় নেই।

প্রিয়াঙ্কা বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে এই শিশুদেরও আর সবার মত বেড়ে ওঠার অধিকার আছে,  স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে।

 

রোহিঙ্গা শিশুদের পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি ফেইসবুক লাইভে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তদের প্রশ্নেরও জবাব দেন প্রিয়াঙ্কা।

তিনি বলেন, “এই শিশুদের ধর্ম কী, বাবা-মা কে, এদের পরিচয় কী এগুলো বড় বিষয় নয়। এখন এদের দরকার আপনার সহানুভূতি।”

এই চলচ্চিত্র তারকা বলেন, ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ করে শরণার্থী শিশুদের সঙ্গে কথা বলে তিনি সব জায়গায় দেখেছেন- এই শিশুরা লেখপড়া করতে চায়, শিখতে চায়।

পাঁচ বছরের একটি শিশু তাকে বলেছে, সে বড় হয়ে সাংবাদিক হতে চায়, নিজের দেশের মানুষের লড়াইয়ের কথা সবাইকে জানাতে চায়।

প্রিয়াঙ্কা বলেন, এই রোহিঙ্গা শিশুদের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। ক্যাম্পে তাদের জন্য এখন মৌলিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের বার্মিজ, ইংরেজি ও গণিত শেখানো হচ্ছে। কিন্তু তাদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

এই শিশুদের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি কী?

এই প্রশ্নে প্রিয়াঙ্কা বলেন, এখানে পানির উৎস আর শৌচাগার কাছাকাছি  হওয়ায় যে কোনো সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে ডায়ারিয়ার মত রোগ।  বর্ষায় এসব ঝুপড়ি কীভাবে টিকবে, এই রোহিঙ্গা শিশুরা কীভাবে আশ্রয় পাবে- তারও নিশ্চয়তা নেই।

তাদের খাবারের নিশ্চয়তা নেই, তাদের কোনো কাজ নাই, কোনো কিছুর সুযোগ নেই। বড় হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবই দরকার এই শিশুদের জন্য।

এক ভক্তের প্রশ্নে প্রিয়াঙ্কা বলেন, এই রোহিঙ্গা শিশুরা যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা পেরিয়ে এসেছে, বেশিরভাগ মানুষ তা কল্পনাও করতে পারবে না।

মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৬ বছরের একটি মেয়ের কাছে প্রিয়াঙ্কা শুনেছেন- কীভাবে তার বোনকে ধর্ষক করার পর ছুরির মুখে তাকেও ঘর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। তারপরও সে কীভাবে বাঁচার চেষ্টা করেছে, বাধা দিয়েছে।

“সে লড়াই করেছে, লড়াই করেছে, বার বার লড়তে চেয়েছে। জানতে চেয়েছিলাম- এই শক্তি কোথায় পেলে। ও বলেছে, জন্ম নিলে মরতে তো হবেই। তাই বলে নিজের সম্মান তো কাউকে কেড়ে নিতে দিতে পারি না। তার কাছ থেকে আমি লড়াই করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।”