কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে মধ্য আকাশে দুর্ঘটনার পর বিমানবাহিনীর দুটি প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে।
Published : 27 Dec 2017, 06:35 PM
দুই উড়োজাহাজের চারজন বৈমানিকের সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার সাধন কুমার মোহন্ত জানান, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিমানবাহিনীর দুটি প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরে মহেশখালী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের পুটিবিলা পালপাড়া এবং ছোট মহেশখালীর মাইজপাড়া এলাকায় দুটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর আসে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বিডিনিউজ টায়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই মহেশখালী ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
পরে কক্সবাজার থেকে ফায়ার সার্ভিসের আরও একটি দল এবং পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
“চার পাইলটের সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাদের বিএনএস পতেঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা সবাই আশঙ্কামুক্ত। তবে দুর্ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি।”
কী কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তা অনুসন্ধানের জন্য ‘উচ্চ পর্যায়ের’ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে বিমান বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, মধ্য আকাশে সংঘর্ষের পরই বিমান দুটি বিধ্বস্ত হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
মহেশখালীর গোরকঘাটা এলাকার বাসিন্দা আকাশ দেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সন্ধ্যার পর তারা বিকট শব্দ শোনেন। এর পরপরই পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান সরওয়ার আজমের বাড়ির পেছনে খালি জায়গায় আগুন জ্বলে উঠতে দেখা যায়।
বিধ্বস্ত হওয়ার সময় বিমানের টুকরো ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। কুতুবজোম খোন্দকার পাড়া গ্রামের শহিদ উল্লাহ মাঝি এবং দাসিমাঝি পাড়া গ্রামের নবী হোসেনের বাড়ির উঠানেও এরকম টুকরো অংশ পাওয়া যায়।
পুটিবিলা পালপাড়ায় যেখানে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখানে একটি বাড়িও খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ির মধ্যে এবং আগুন নেভাতে গিয়ে সাতজন আহত হন।
এরা হলেন- আঁখি মনি (১৪), জিয়াউর রহমান (৩৯), এহেছান (১৮), নুরুন্নাহার (৩০), ছেনুয়ারা (৩০), ফায়ার ম্যান আরিফ উল্লাহ (৩৫) ও কনেস্টেবল ফিরুজ আহামদ (২৫) ।
“তবে তদন্তের প্রয়োজনে এখনই ধ্বংসস্তূপ সরানো যাচ্ছে না। বিমান বাহিনীর লোকজন এ ব্যাপারে কাজ করছে।”
ঘটনাস্থলের নিরাপত্তায় পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে অবস্থান করছেন বলে মহাপরিচালক জানান।
এর আগে গত ১১ জুলাই জহুরুল হক বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর লোহাগাড়ার বড় হাতিয়ার ফরিদারঘোনায় এলাকায় বিমানবাহিনীর একটি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। প্যারাশুটে নেমে আসতে পারায় দুই পাইলট প্রাণে বেঁচে যান।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রাশিয়ার তৈরি কমব্যাট প্রশিক্ষণ বিমান ইয়াকভলেভ ইয়াক-১৩০ এর প্রথম কমিশনিং হয় ২০১৫ সালে।
তিন হাজার কিলোগ্রাম গোলাবারুদ বহনে সক্ষম এই উড়োজাহাজ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যুদ্ধকালীন সময়ে আকাশ প্রতিরক্ষা, প্রয়োজনে আক্রমণেও ব্যবহার করা যায়।